আলীবর্দী খাঁ
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নবাব আলীবর্দী খাঁ, বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার মাতামহ। নবাব সিরাজউদ্দৌলা নবার আলীবর্দী খাঁর উত্তরসূরি হন।
আলীবর্দী খাঁ বাংলা, বিহার, ওড়িশার নবাব ছিলেন। তার পূর্ণ নাম মির্জা মুহাম্মদ আলী। তার পিতার নামদ মির্জা মুহাম্মাদ। আরব বংশোদ্ভূত মির্জা মুহাম্মদ আজম শাহের (আওরঙ্গজেবের দ্বিতীয় পুত্র) দরবারের একজন কর্মকর্তা ছিলেন। আলীবর্দী খাঁর মা খুরসানের এক তুর্কি উপজাতি হতে এসেছিলেন। তার পিতামহ আওরঙ্গজেবের সৎ ভাই ছিলেন। পূর্ণ বয়স্ক হবার সাথে সাথে আজম শাহ তাকে পিলখানার পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেন।
১৭০৭ এর যুদ্ধে আজম শাহের মৃত্যুর পর চাকরি চলে যাওয়ার মির্জা মুহাম্মদ আলীর পরিবার সমস্যার সম্মুখীন হয়। তখন, বাকি জীবনের জন্য তিনি সপরিবারে ১৭২০ সালে বাংলায় চলে আসেন। কিন্তু বাংলার তৎকালীন নবাব মুর্শিদকুলী খান তাকে গ্রহণ করেন নাই। ফলে, মির্জা মুহাম্মদ আলী চুতাকে গমন করেন, যেখানে সুজাউদ্দিন মুহাম্মদ খান তাকে সম্মানের সাথে গ্রহণ করেন। সুজাউদ্দিন তাকে মাসিক ১০০ রুপি বেতনের চাকুরিতে নিয়োগ দান করেন। তার কাজ ও বিশ্বস্ততায় খুশি হয়ে তিনি তাকে পদোন্নতি দেন। বিশেষ করে তাকে ওড়িশার কিছু জমিদারির তদারকি দান করেন।
ওড়িশাতে মির্জা মুহাম্মদ আলী প্রশাসনিক দক্ষতা লাভ করেন। ওড়িশার সন্তোষজনক দ্বায়িত্ব পালন ছাড়াও সুজাউদ্দিনের শ্বশুর মুর্শিদকুলী খানের মৃত্যুর পর বাংলার মসনদ রক্ষায় সুজাউদ্দিনকে তিনি সাহায্য করেন। ফলশ্রুতিতে মির্জা মুহাম্মদ আলীকে চাকলা আকবরনগর (রাজমহল) এর ফৌজদার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৭২৮ সালে তাকে আলীবর্দি উপাধি দেওয়া হয়। নতুন ফৌজদারের অধীনে রাজমহলের জনগন শান্তি ও সমৃদ্ধি লাভ করে। প্রদেশের প্রায় সকল ক্ষেত্রে আলীবর্দি সুজাউদ্দিনের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। নবাব তার প্রতি এমন নির্ভরশীল হয়ে পড়েন যে, বছরে একবার রাজমহল থেকে মুর্শিদাবাদে তার ডাক পড়ত।
১৭৩২ সালে সম্রাট মুহাম্মদ শাহ বিহারকে বাংলা সুবার অধীনে নিয়ে আসেন। কিন্তু নবাব সুজাউদ্দিন সম্পূর্ণ অঞ্চল নিজের অধীনে রাখার থেকে, আলীবর্দীকে বিহারের নিজাম হিসেবে নিয়োগ দেবার সিদ্ধান্ত নেন। কিছু দিন আগে আলীবর্দির কনিষ্ঠ কন্যা আমিনা বেগম তার কনিষ্ঠ ভাতিজা জৈনুদ্দিন আহমেদ খানকে বিয়ে করেন। আমিনা বেগমের গর্ভেই বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার জন্ম হয়। আলীবর্দীর নিজের কোন পুত্র সন্তান ছিল না। আলীবর্দী সিরাজউদ্দৌলাকে তার উত্তরসূরি ঘোষণা করেন।