ত্রিভুজ
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সমতলীয় জ্যামিতির ভাষায় তিন বাহু দ্বারা সীমাবদ্ধ ক্ষেত্রকে ত্রিভুজ বলা হয়। দ্বি-মাত্রিক তলে ত্রিভুজের তিনটি কোণের সমষ্টি ১৮০ ° বা দুই সমকোণ।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা] প্রকারভেদ
[সম্পাদনা] বাহুর দৈর্ঘ্যের ভিত্তিতে
বাহুর দৈর্ঘ্যের ভিত্তিতে ত্রিভুজ তিন প্রকারের হতে পারে। যেমন :
- সমবাহু ত্রিভুজ - যার তিনটি বাহুরই দৈর্ঘ্য সমান।
- সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ - যার যেকোন দুইটি বাহুর দৈর্ঘ্য সমান।
- বিষমবাহু ত্রিভুজ - যার তিনটি বাহুর দৈর্ঘ্য তিন রকম।
![]() |
![]() |
![]() |
সমবাহু | সমদ্বিবাহু | বিষমবাহু |
[সম্পাদনা] কোণের ভিত্তিতে
কোণের ভিত্তিতে ত্রিভুজ তিন প্রকার হতে পারে -
- সমকোণী ত্রিভুজ - যার যেকোন একটি কোণ ১ সমকোণ বা ৯০° এর সমান।
- সূক্ষ্ণকোণী ত্রিভুজ - যার তিনটি কোণই সূক্ষ্ণকোণ
- স্থূলকোণী ত্রিভুজ - যার যেকোন একটি কোণ স্থূলকোণ।
![]() |
![]() |
![]() |
সমকোণী | স্থূলকোণী | সূক্ষ্ণকোণী |
[সম্পাদনা] ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল পরিমাপ
ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল পরিমাপের নানা পদ্ধতি আছে। নিম্নে এরকম কয়েকটি পদ্ধতি আলোচনা করা হল।
[সম্পাদনা] জ্যামিতির মাধ্যমে
ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল S পরিমাপের সূত্র হল:
- S = ½bh,
যেখানে b হল ত্রিভুজের যেকোণ একটি বাহুর দৈর্ঘ্য (ভূমি), h হল উচ্চতা, অর্থাৎ ভূমির বিপরীত শীর্ষবিন্দুর হতে ভূমির উপরে অংকিত লম্ব। নিম্নের ছবিতে এটির ব্যাখ্যা ও উদাহরণ দেখান হলঃ
সূত্রটি কিভাবে এসেছে, তা উপরের ছবি থেকে অনুধাবন করা সম্ভব। সবুজ বর্ণে চিহ্নিত ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল বের করার জন্য, প্রথমে ত্রিভুজের একটি প্রতিকৃতি (উপরে নীল বর্ণের ত্রিভুজটি) তৈরী করে, সেটিকে ১৮০° ঘুরানো হয়েছে। এর পর ত্রিভুজটি দুটিকে যুক্ত করে একটি সামান্তরিক পাওয়া যায়। সামান্তরিকের কিছু অংশ কেটে অন্য পাশে যুক্ত করে একটি আয়তক্ষেত্র পাওয়া যাবে। যেহেতু এই আয়তক্ষেত্রটির ক্ষেত্রফল হল bh, ত্রিভুজটির ক্ষেত্রফল অবশ্যই তার অর্ধেক, অর্থাৎ ½bh.
[সম্পাদনা] ভেক্টরের সাহায্যে
পূর্বের উদাহরণের মত করে সামান্তরিকের ক্ষেত্রফল ভেক্টরের মাধ্যমের বের করে, তা থেকে ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল বের করা সম্ভব। যদি AB ও AC যথাক্রমে A হতে B পর্যন্ত এবং A হতে C পর্যন্ত ভেক্টর হয়ে থাকে, তাহলে ABDC সামান্তরিকের ক্ষেত্রফল হল |AB × AC|, অর্থাৎ AB ও AC ভেক্টর দুইটির ক্রস গুণনের সমান। |AB × AC| হল |h × AC| এর সমতূল্য, যেখানে h হল সামান্তরিকটির উচ্চতাসূচক ভেক্টর।
এই ফলাফল অনুযায়ী ত্রিভুজ ABC এর ক্ষেত্রফল হল সামান্তরিকটির অর্ধেক, অর্থাৎ S = ½|AB × AC|.
[সম্পাদনা] ত্রিকোণমিতির সাহায্যে
ত্রিভুজের উচ্চতা ত্রিকোণমিতির সাহায্যে সহজেই বের করা যায়। বাম পার্শ্বের ছবিতে, ত্রিভুজ ABC এর উচ্চতা
- h = a sin γ।
এই ফলাফল উপরে উল্লিখিত S = ½bh সূত্রে বসালে পাওয়া যায়, ত্রিভুজটির ক্ষেত্রফল হল,
- S = ½ab sin γ
[সম্পাদনা] স্থানাংকের মাধ্যমে
যদি A বিন্দুটির কার্তেসীয় স্থানাংক (0, 0) এবং B ও C এর স্থানাংক যথাক্রমে B = (xB, yB) ও C = (xC, yC) হয়ে থাকে, তাহলে ত্রিভুজটির ক্ষেত্রফল S হল এই বিন্দু তিনটির নির্ণায়কের অর্ধেক, অর্থাৎ
যেকোন তিন বিন্দুর জন্য সাধারণ ভাবে সূত্রটি হল:
ঘণজ্যামিতি, অর্থাৎ ত্রিমাত্রিক জ্যামিতিতে, ত্রিভুজাকৃতির এলাকা {A = (xA, yA, zA), B = (xB, yB, zB) and C = (xC, yC, zC)} এর ক্ষেত্রফল হল তিনটি মূল সমতলে (i.e. x=0, y=0 and z=0) ত্রিভুজটির অভিক্ষেপের পিথাগোরীয় যোগফল, অর্থাৎ -
[সম্পাদনা] হিরনের সূত্রের সাহায্যে
ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল বের করার জন্য হিরনের সূত্র হল:
যেখানে s = ½ (a + b + c) হচ্ছে অর্ধ-পরিসীমা, অর্থাৎ ত্রিভুজটির পরিসীমার অর্ধেক।
[সম্পাদনা] ত্রিভুজ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিন্দু ও রেখা
[সম্পাদনা] শীর্ষ
যে তিনটি বিন্দু জুড়ে ত্রিভুজ তৈরী হয়। প্রতিটি শীর্ষ এক জোড়া বাহুর সংযোগ স্থল।
[সম্পাদনা] বাহু
ত্রিভুজের পরিসীমা যে তিনটি রেখাংশ দ্বারা সমপূর্ণ হয়।
[সম্পাদনা] মধ্যমা
ত্রিভুজের যেকোন শীর্ষ ও বিপরীত বাহুর মধ্যবিন্দু সংযোগকারী রেখাংশ এক একটি মধ্যমা। ত্রিভুজের মধ্যমাত্রয় সমবিন্দুগামী।
[সম্পাদনা] ভরকেন্দ্র
যেখানে মধ্যমাত্রয় মিলিত হয় ত্রিভুজের ভরকেন্দ্র (centroid) হল সেই বিন্দু
(ভরকেন্দ্র গামী যেকোন রেখার দুপাশের ক্ষেত্রফল (এবং সেই অনপাতে ভর) সমান।
ভরকেন্দ্র প্রতিটি মধ্যমাকে ১:২ অনুপাতে বিভক্ত করে।
[সম্পাদনা] লম্বকেন্দ্র
ত্রিভুজের তিনটি শীর্ষ থেকে বিপরীত বাহুগুলির উপর তিনটি লম্ব সমবিন্দুগামী, এবং বিন্দুটির নাম লম্বকেন্দ্র(orthocenter)
[সম্পাদনা] পরিবৃত্ত
তিনটি শীর্ষবিন্দু যোগ করে যেমন একটিমাত্র ত্রিভুজ হয় তেমনি তিনটি বিন্দু (শীর্ষ)গামী বৃত্তও একটিই, এর নাম পরিবৃত্ত।
[সম্পাদনা] পরিকেন্দ্র
পরিবৃত্তের কেন্দ্র (যে বিন্দু ত্রিভুজের শীর্ষত্রয় থেকে সমদূরত্বে স্থিত)।
[সম্পাদনা] অসমতলীয় জ্যামিতিতে ত্রিভুজ
কেবলমাত্র সমতলীয় জ্যামিতিতে (ইউক্লিডিয় জ্যামিতি Euclidean geometry বা অধিবৃত্তীয় জ্যামিতি Parabolic geometry) ত্রিভুজের তিনটি কোণের সমষ্টি ১৮০ ° বা দুই সমকোণ। অসমতলীয় বা অন-ইউক্লিডিয় জ্যামিতির উদাহরণ:
- গোলকীয় (spherical geometry) বা বৃহত্তরভাবে রীমানীয় জ্যামিতি (উপবৃত্তীয় জ্যামিতি, elliptic geometry): তলীয় (গউসীয়) বক্রতা (Gaussian curvature) ধনাত্মক (+1) অর্থাৎ বক্রতা ব্যাসার্ধ সর্বদা তলের একটি পাশে থাকে। মহাকর্ষ খুব শক্তিশালী হলে মহাশূণ্য এধরণের জ্যামিতি অবলম্বন করে, যা আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতবাদ তত্বে ব্যবহৃত। উপবৃত্তীয় জ্যামিতিতে (যেমন গোলকের উপর আঁকা) ত্রিভুজের তিনটি কোণের সমষ্টি > ১৮০ °।
- পরাবৃত্তীয় জ্যামিতি (hyperbolic geometry) বা, বলিয়াই(Bolyai), লোবাশেভস্কি(Lobachevsky) ও গাউস(Gauss)এর জ্যামিতি: তলীয় (গউসীয়) বক্রতা ঋণাত্মক (-1) অর্থাৎ তলটিকে একভাবে লন্বচ্ছেদ করলে বক্রতা ব্যাসার্ধ (radius of curvature) তলের যে পাশে থাকে, তার আড়াআড়িভাবে লন্বচ্ছেদ করলে একই বিন্দুগামী বক্রতা ব্যাসার্ধ তখন তলের অন্য পাশে থাকে।পরাবৃত্তীয় জ্যামিতিতে ত্রিভুজের তিনটি কোণের সমষ্টি < ১৮০ °।