প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার (১৯১১-১৯৩২) ভারত উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নারী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তত্কালীন পূর্ববঙ্গে জন্ম নেয়া এই বাঙালি বিপ্লবী তখনকার ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন, এবং জীবন বিসর্জন করেন।
[সম্পাদনা] প্রাথমিক জীবন
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ১৯১১ সালের ৫ই মে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহন করেন। চট্টগ্রামের ডাঃ খাস্তগীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় হতে ম্যাট্রিক পাস করার পর ঢাকার ইডেন কলেজে ভর্তি হন। ১৯২৯ ইডেন কলেজ হতে আই.এ. তে মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন। মাসিক বিশ টাকা বৃত্তিতে কলকাতার বেথুন কলেজে পড়তে যান। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বি.এ. পরীক্ষায় ডিস্টিংশনসহ পাস করেন এবং চট্টগ্রামের নন্দন কানন অর্পণাচরণ ইংরেজী বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষয়ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন।
[সম্পাদনা] বিপ্লবী কর্মকান্ড
ইডেন কলেজে পড়ার সময় বিপ্লবী সংগঠন 'দিপালী সঙ্ঘ'-র সাথে যুক্ত হন। বেথুন কলেজে ছাত্রীবস্থায় ছাত্রী সঙ্ঘ-র সক্রিয় কর্মী ছিলেন। চট্টগ্রামে বিপ্লবী দলের মেয়ে সদস্য ও ছাত্রীদের নিয়ে একটি চক্র গড়ে তোলেন। সূর্যসেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বোমা তৈরির খোল আনার দায়িত্ব দেয়া হয় প্রীতিলতার নেতৃত্বের চক্রকে। তারা সুটকেসে লুকিয়ে খোল নিয়া আসেন যা পরবর্তী বিপ্লবী কর্মকান্ডে ব্যবহৃত হয়। ১৯৩২ সালের ১৩ই জুন চট্টগ্রামের বিপ্লবীদের প্রধান কেন্দ্র ধলঘাটের ঘাঁটিতে সূর্যসেনের সাথে সাক্ষাৎ করেন। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ বাড়ি ঘেরাও করলে সূর্যসেন ও প্রীতিলতা বাড়ির পেছন দিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। সেখানে বিপ্লবীদের সাথে বন্দুক যুদ্ধে বিপ্লবী নির্মলকুমার সেন নিহত হন। এর পরে বিপ্লবীরা চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিলে প্রীতিলতা এতে অংশগ্রহন করেন। চট্টগ্রাম ইউরোপীয়ান ক্লাবের ফটকে লেখা ছিল কুকুর ও ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ।
[সম্পাদনা] ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ এবং মৃত্যু
১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিলে সূর্য সেন অভিযানের নেতৃত্ব প্রীতিলতাকে দেন। সেদিন রাতে তিনি সফলভাবে অভিযান পরিচালনা করেন। সেই অভিযানে হতাহত হয় অনেক ইংরেজ নরনারী। আভিযানের শেষে ফেরার সময় আত্মগোপনকারী এক ইংরেজ তরুণের গুলিতে আহত হন। আহতাবস্থায় ধরা পড়ার চাইতে আত্মাহুতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পটাশিয়াম সায়ানাইড ভক্ষণ করে আত্মাহুতি দেন। তার মৃতদেহের পোশাকে নিজ হাতে লেখা বিবৃতিতে এক জায়গায় লেখা ছিল,
আমরা দেশের মুক্তির জন্যে এই সশস্ত্র যুদ্ধ করিতেছি। অদ্যকার পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ স্বাধীনতা যুদ্ধের একটি অংশ। ব্রিটিশরা জোর পূর্বক আমাদের স্বাধীনতা ছিনাইয়া লইয়াছে। ............ সশস্ত্র ভারতীয় নারী সমস্ত বিপদ ও বাধাকে চূর্ণ করিয়া এই বিদ্রোহ ও সশস্ত্র মুক্তি আন্দোলনে যোগদান করিবেন এবং তাহার জন্য নিজেকে তৈয়ার করিবেন- এই আশা লইয়া আমি আজ আত্মদানে অগ্রসর হইলাম। |