আটকে পড়া বিহারী
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আটকে পড়া বিহারী বলতে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত মূলত উর্দুভাষী ব্যক্তি, যারা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানের আনুগত্য স্বীকার করেছিল, তাদের বোঝানো হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে তেরোটা ভিন্ন-ভিন্ন অঞ্চলের ৬৬টা ক্যাম্পে এখনও আড়াই লাখ থেকে তিন লাখের মতো আটকে পড়া বিহারি আছে। আটকে পড়া পাকিস্তানিই বলা হয় এদেরকে। আঞ্চলিক বিচারে এদের জন্ম ভারতের বিহার রাজ্যে; এর উত্তরে নেপাল, পশ্চিমে উত্তর প্রদেশ, দক্ষিণে ঝাড়খণ্ড আর পূবে পশ্চিম বঙ্গ। বৌদ্ধ আর জৈন ধর্মের জন্মভূমি এই বিহার হলেও, ঐতিহ্যগতভাবে বিহার রাজ্য হিন্দু-সংস্কৃতি-প্রধান। ফলে, ১৯৪৭-এর ভারত বিভাজনের প্রাক্কালে এ-অঞ্চলের উর্দু ভাষাভাষি মুসলিম সংখ্যালঘুরা পাকিস্তানের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে চলে আসে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে। এক প্রজন্ম পার না হতেই পাকিস্তানের বিভাজন অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়ায়, এবং '৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান হয়ে যায় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এসব বিহারিরা পশ্চিম পাকিস্তানকে সমর্থন করে, বিশেষত ভাষা এবং ধর্মের কারণে। বিপুল সংখ্যক বিহারি রাজাকার, আলবদর ইত্যাদি এদেশি পাকিস্তান সমর্থক গোষ্ঠির সঙ্গে অথবা সরাসরি পাকিস্তানি সামরিক জান্তার সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা নিধনসহ স্বাধীনতা বিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। অন্যান্যরা সাধারণ বাঙালির মতোই নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে।
স্বাধীনতা যুদ্ধের পর এদেরকে এদেশে রাখার ব্যাপারে বাংলাদেশ কোনো দায় বোধ করেনি। অপরদিকে, পাকিস্তান সরকার এদের আর ফিরিয়ে নিতে চাইলো না। আন্তর্জাতিক রিফিউজি আইন মোতাবেক বাংলাদেশ সরকার এদেরকে রেশন দিতে বাধ্য হলো।
বাংলাদেশ থেকে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ, জাতিসংঘের রিফিউজি বিষয়ক হাই কমিশনারসহ বিশ্বব্যাপি বেসরকারি অনেক মানবাধিকার সংগঠন থেকে ক্রমাগত চাপ দিয়েও পাকিস্তানকে দিয়ে এ-কাজটি করানো সম্ভব হয়নি।
ক্যাম্পগুলোতে বিভিন্ন সমস্যা যেমন ঘিঞ্জি আবাসন, পানি, পয়ঃনিষ্কাষণ, যৌথ জীবন ইত্যাদি রয়েছে। অনেক ছেলেই নিজেদের মধ্যে বিবাহে আগ্রহী নয়, তারা সম্ভব হলে বাংলাদেশি কোনো মেয়ের সঙ্গে ঘর বাঁধছে। ফলে বাড়ছে বিহারি অবিবাহিত মেয়ের সংখ্যা- পরিসংখ্যান মতে, এ সংখ্যা কুড়ি হাজারেরও বেশি।