আফতাব আহমাদ
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
অধ্যাপক ডঃ আফতাব আহমাদ (১৯৪৯-২০০৬) একাধারে একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, মুক্তিযোদ্ধা, বুদ্ধিজীবী, কলামিষ্ট, উনসত্তরের গণঅভ্যূত্থানের অন্যতম সংগঠক, এককালের তুখোড় ছাত্রনেতা এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ছিলেন। তিনি নোয়াখালীর একজন কৃতি সন্তান।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা] জন্মঃ
অধ্যাপক ডঃ আফতাব আহমাদ ১৯৪৯ সেলার ৩১ ডিসেম্বর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার মির্জানগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মরহুম জালাল উদ্দীন আহমদ।
[সম্পাদনা] শিক্ষা ও কর্মজীবনঃ
তিনি ১৯৬৬ সালে কুমিল্লা বোর্ড থেকে এসএসসি এবং ১৯৬৮ সালে এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৭১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে বিএ অনার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯৭২ সালের মাষ্টার্স পরীক্ষায় একই বিভাগ থেকে তিনি দ্বিতীয় শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯৮৩ সালে তিনি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি ১৯৭২ সালে সাংবাদিকতা পেশায় যোগ দেন। তিনি দৈনিক গণকন্ঠের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৭ সালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে যোগ দেন। সেখানে তিনি ১৯৮১ সালে সহকারী অধ্যাপক এবং ১৯৮৪ সালে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৮৩-১৯৮৯ সালে তিনি চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৮৬-১৯৯০ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন। ১৯৮৫ সালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং একই সময়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৮ সালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ছিলেন।
ডঃ আফতাব আহমাদ ১৯৯৫ সালের ২ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপক পদে যোগদান করেন। তিনি ২০০২-২০০৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ২০০৩ সালের ৫ জুলাই থেকে ২০০৫ সালের ২০ জুলাই পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে পুনঃযোগদান করেন।
অধ্যাপক আফতাব ছাত্র জীবন থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। তার বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ছিলেন। অনলবর্ষীবক্তা, স্পষ্টভাষী এবং সাহসী হিসেবেও তার পরিচিতি ছিল। অনেক খোলামেলা বক্তব্য দেয়ার কারণে বিভিন্ন সময়ে তিনি আলোচিত-সমালোচিতও হন। ভাল ফলাফল করার পরও রাজনৈতিক মতাদর্শগত পার্থক্যের কারণে স্বাধীনতার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েও যোগদান করতে পারেননি। স্বাধীনতার পর কয়েক মাস তাকে কারাভোগ করতে হয়। ২০০০ সালে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তন নিয়ে বক্তব্য দেয়ার কারণে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তপক্ষ তাকে বাধ্যতামূলক ছুটি দেয় এবং শিক্ষক সমিতি থেকে তিনি বহিষ্কৃত হন। কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের তৎকালীন নেতা-কর্মীরা তার কলাভবনের নিচ তলার কক্ষটি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। তার অসংখ্য লেখা দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন জার্নাল এবং পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ছাত্র জীবনে তিনি জাসদ সমর্থিত ছাত্রলীগের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। পরে কর্মজীবনে তিনি বিএনপি (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) সমর্থিত সাদা দলের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তৎকালীন (২০০৬) ক্ষমতাসীন চারদলীয় জোট গঠনের পিছনেও তার ছিল উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন এবং শিক্ষক সমিতি তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেয়।
[সম্পাদনা] উল্লেখযোগ্য অবদানঃ
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিনি একজন সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধাদের "বীরশ্রেষ্ঠ", "বীরউত্তম", "বীরপ্রতীক", "বীরবিক্রম" এই খেতাব গুলোর প্রস্তাব তিনিই প্রথম করেন[এই তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তথ্যসূত্র প্রয়োজন]।
[সম্পাদনা] উল্লেখযোগ্য গ্রন্থঃ
- কালের চালচিত্র, এই দেশ এই সময়ে
[সম্পাদনা] মৃত্যুঃ
২০০৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকাল ৯ টায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫৭ বছর বয়সে এই কৃতিসন্তান মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগে তিনি টানা চারদিন আততায়ীর গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করেন। এর আগে ২০০৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোডস্থ বাসভবনে সন্ত্রাসী কর্তৃক গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তাকে প্রথমে ঢাকার শমরিতা এবং পরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মীরপুরে বুদ্ধিজীবী করবস্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত অংশে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়।