কম্পিউটার বিজ্ঞান
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কম্পিউটার বিজ্ঞান জ্ঞানের একটি শাখা যেখানে তথ্য ও গণনার তাত্ত্বিক ভিত্তির গবেষণা করা হয়, এবং কম্পিউটার ব্যবস্থাসমূহে এগুলো বাস্তবায়ন ও ব্যবহার করা হয়।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা] ইতিহাস
কম্পিউটার বিজ্ঞানের উৎস হিসেবে ইংরেজ বিজ্ঞানী চার্লস ব্যাবেজের কাজকে উল্লেখ করা যায়। ব্যাবেজ ১৮৩৭ সালে একটি প্রোগ্রামযোগ্য যান্ত্রিক গণনাযন্ত্র প্রস্তাব করেছিলেন।
১৯৪০-এর দশকে ইলেকট্রনিক ডিজিটাল কম্পিউটারের আবির্ভাবের আগ পর্যন্ত কম্পিউটার বিজ্ঞানকে বিজ্ঞান বা প্রকৌশলবিদ্যার চেয়ে একটি আলাদা শাস্ত্র হিসেবে গণ্য করা হত না। তবে এর পর থেকে এটি অনেক শাখা প্রশাখার জন্ম দিয়েছে, যেগুলো একান্তই কম্পিউটার বিজ্ঞান সম্বন্ধীয়।
অ্যালগোরিদম তত্ত্ব, গাণিতিক যুক্তিবিজ্ঞান, ও প্রোগ্রাম সংরক্ষণের ক্ষমতাবিশিষ্ট ইলেক্ট্রনিক কম্পিউটারের উদ্ভাবন - এই তিনের সম্মিলনে ১৯৪০-এর দশকের শুরুতে কম্পিউটার বিজ্ঞানের জন্ম হয়। ১৯৩০-এর দশকে অ্যালান টুরিং, আলোন্জো চার্চ ও কুর্ট গ্যোডেলের অ্যালগোরিদম তত্ত্বসমূহ ও এগুলো যন্ত্রে বাস্তবায়ন সংক্রান্ত গবেষণা, তারও ৬০ বছর আগে অগুস্টা আডা (কাউন্টেস অফ লাভলেস)-এর উদ্ভাবিত অ্যালগোরিদম, ১৯২০-এর দশকে ভানেভার বুশের উদ্ভাবিত অ্যানালগ কম্পিউটার, এবং ১৯৩০-এর দশকে হাওয়ার্ড আইকেন ও কনরাড ৎসুজে কর্তৃক উদ্ভাবিত ইলেকট্রনিক কম্পিউটার - এ সবই কম্পিউটার বিজ্ঞানের জন্মে ভূমিকা রাখে। ১৯৪০-এর দশকের শেষের দিকে জন ভন নিউম্যানের রচনাবলি নতুন এই শাস্ত্রের তাত্ত্বিক ভিত্তি সুদৃঢ় করে।
১৯৪০-এর দশকের শেষে ও ১৯৫০-এর দশকের শুরুর দিকে কম্পিউটার বিজ্ঞানের আদি পর্যায়ে গবেষণার লক্ষ্য ছিল বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের জন্য ব্যবহৃত গণনা করার প্রক্রিয়াগুলোকে স্বয়ংক্রিয় রূপ দেওয়া। কোন প্রক্রিয়ায় গণনা করলে তাড়াতাড়ি সঠিক ফল পাওয়া যাবে, তা বের করার জন্য বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা গণনার বিভিন্ন তাত্ত্বিক মডেল তৈরি করেন। এসময় কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং গণিতের সাংখ্যিক বিশ্লেষণ নামক শাখার মধ্যে বহু মিল ছিল, যে শাখায় গণনার নির্ভুলতা ও যথার্থতা নিয়ে গবেষণা করা হত।
১৯৫০ ও ১৯৭০-এর দশকের মধ্যবর্তী সময়ে কম্পিউটারের ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা এসময় কম্পিউটারের ব্যবহার সরল করার উদ্দেশ্যে এক ধরনের কৃত্রিম ভাষা তথা প্রোগ্রামিং ভাষাসমূহের উদ্ভাবন করেন এবং কম্পিউটার ও কম্পিউটার ব্যবহারকারীর মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনকারী অপারেটিং সিস্টেম প্রোগ্রামের প্রচলন করেন। তাঁরা কম্পিউটারের নতুন ব্যবহারিক ক্ষেত্র সন্ধান ও নতুন ধরনের কম্পিউটার ডিজাইন নিয়েও গবেষণা চালান। এসময় প্রথম কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করা হয় এবং গণনা ও মনের চিন্তাধারার মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। কম্পিউটার বিজ্ঞানের পরিসর যথেষ্ট বৃদ্ধি পায় এবং ১৯৬০-এর দশকের শুরুর দিকেই পাশ্চাত্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগ চালু ও ডিগ্রী প্রদান শুরু হয়।
১৯৭০-এর দশকে কম্পিউটার চিপ প্রস্তুতকারকেরা ব্যাপকভাবে মাইক্রোপ্রসেসর উৎপাদন করতে শুরু করেন। মাইক্রোপ্রসেসর হল কম্পিউটারের ভেতরে অবস্থিত প্রধান তথ্য প্রক্রিয়াকারী কেন্দ্র। এই নতুন প্রযুক্তি কম্পিউটার শিল্পব্যবস্থায় বিপ্লব আনে; কম্পিউটার তৈরির খরচ বহুলাংশে কমে যায় এবং কম্পিউটার তথ্য প্রক্রিয়াকরণের দ্রুতি বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। মাইক্রোপ্রসেসরের ওপর ভিত্তি করেই সৃষ্টি হয় ব্যক্তিগত কম্পিউটার বা পিসি। পিসি-র আবির্ভাবের পর কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। ১৯৭০-এর শুরু থেকে ১৯৮০-র দশকের পুরোটা জুড়ে কম্পিউটার বিজ্ঞানের পরিধি ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। কম্পিউটিং শিল্পে উদ্ভাবিত নতুন নতুন প্রযুক্তি চালনার জন্য এবং ব্যক্তিগত কম্পিউটারে ব্যবহার্য নতুন অ্যাপ্লিকেশনগুলো তৈরির জন্য এর কোন বিকল্প ছিল না। কম্পিউটার বিজ্ঞানের অতীতের গবেষণাগুলোর ফলাফল ব্যক্তিগত কম্পিউটারের প্রসারের মাধ্যমে ধীরে ধীরে জনসাধারণের কাছে পৌঁছাতে শুরু করে।
কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা অনবরত কম্পিউটার ও তথ্য ব্যবস্থাসমূহের উন্নতি সাধন করে চলেছেন। তাঁরা আরও জটিল, নির্ভরযোগ্য ও শক্তিশালী কম্পিউটার ডিজাইন করছেন, এমন সব কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তৈরি করছেন যেগুলো দিয়ে বিপুল পরিমাণ তথ্য দক্ষতার সাথে আদান প্রদান করা যায় এবং কম্পিউটারকে কীভাবে বুদ্ধিমান সত্তার মত আচরণ করানো যায়, তার উপায়গুলো খুঁজে বের করছেন। কম্পিউটার ক্রমে আধুনিক সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হচ্ছে, ফলে কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা বর্তমান সমস্যাগুলোর আরও ভাল সমাধান উদ্ভাবন করছেন এবং নতুন নতুন সমস্যার রসদও পাচ্ছেন।
[সম্পাদনা] লক্ষ্য
কম্পিউটার বিজ্ঞানের লক্ষ্য বিচিত্র। জনসাধারণকে বর্তমান কম্পিউটারগুলো চালনা শিক্ষা দেয়া থেকে শুরু করে ভবিষ্যতমুখী প্রযুক্তি, যেগুলো কয়েক দশকেও বাস্তবায়নের সম্ভাবনা নেই, সেগুলো নিয়ে গবেষণা – এ সবই কম্পিউটার বিজ্ঞানের আওতায় পড়ে। সব বিশেষ বিশেষ লক্ষ্যেরই মূল লক্ষ্য তথ্যের উন্নত ব্যবহারের মাধ্যমে মানবজাতির বর্তমান ও ভবিষ্যতের উন্নতিসাধন।
তত্ত্ব, প্রকৌশল ও পরীক্ষা নিরীক্ষা – এ তিনের সমন্বয়েই কম্পিউটার বিজ্ঞান। কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা একটি তত্ত্ব দাঁড় করান, তারপর সেই তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সমন্বয়ে একটি কম্পিউটার ব্যবস্থা তৈরি করেন এবং তারপর সেটি পরীক্ষা করে দেখেন।
অনেকের মনে হতে পারে যে কম্পিউটার পরীক্ষানিরীক্ষার আবার প্রয়োজন কি? কম্পিউটারকে যা আদেশ দেওয়া হয় তা-ই সে পালন করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বাস্তম বিশ্বে কম্পিউটারের নানা জটিল ব্যবহারের সময় কম্পিউটারের অনেক অজানা আচরণ পরিলক্ষিত হয় যেগুলোর পূর্বাভাস দেওয়া যায় না। পরীক্ষা নিরীক্ষা আর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ তাই কম্পিউটার বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
[সম্পাদনা] শাখা
কম্পিউটার বিজ্ঞানকে নিচের শাখাগুলোতে ভাগ করা যায়:
- অ্যালগোরিদম ও উপাত্ত কাঠামোসমূহ
- প্রোগ্রামিং ভাষাসমূহ
- কম্পিউটার স্থাপত্য
- অপারেটিং ব্যবস্থা ও নেটওয়ার্ক
- সফটওয়্যার প্রকৌশল
- ডাটাবেস ও তথ্য আনয়ন
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটবিজ্ঞান
- গ্রাফিক্স
- মানুষ-কম্পিউটার মিথষ্ক্রিয়া
- গণনামূলক বিজ্ঞান
- প্রাতিষ্ঠানিক তথ্যবিজ্ঞান
- জীব-তথ্যবিজ্ঞান
[সম্পাদনা] অ্যালগোরিদম ও উপাত্ত সংগঠনসমূহ
অ্যালগোরিদম ও উপাত্ত সংগঠনসমূহ ব্যবহার করেই কম্পিউটার প্রোগ্রাম রচনা করা হয়। অ্যালগোরিদম হল সুনির্দিষ্ট ও সসীম সংখ্যক ধাপবিশিষ্ট পদ্ধতি, যা সসীম সময়ের মধ্যে ও সসীম পরিমাণ স্মৃতি ব্যবহার করে কোন সমস্যার সমাধান করে। অতিব্যবহৃত অ্যালগোরিদমগুলোর মধ্যে আছে কোন উপাত্ত সংগ্রহ অনুসন্ধান, উপাত্ত সুবিন্যস্তকরণ, মেট্রিক্স গুণন ও অন্যান্য সাংখ্যিক অপারেশনসমূহ, ইত্যাদি। কোন উপাত্ত সংগঠন (data structure) হল তথ্যের একটি নির্দিষ্ট ধরনের সুবিন্যস্ত রূপ, যা উপাত্তের বিভিন্ন মানের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে। লিস্ট, অ্যারে, রেকর্ড, স্ট্যাক, কিউ, ট্রি, ইত্যাদি কিছু বহু-ব্যবহৃত উপাত্ত সংগঠন।
অ্যালগোরিদম তত্ত্বের মধ্যে রয়েছে গণনাযোগ্যতার তত্ত্ব, গণনামূলক জটিলতা, তথ্য-ভিত্তিক জটিলতা, সহবর্তমানতা তত্ত্ব, সম্ভাবনাভিত্তিক অ্যালগোরিদম, আরোহী ও সাম্পর্কিক ডাটাবেস তত্ত্ব, দৈবকৃত অ্যালগোরিদম, বিন্যাস-মিলানো অ্যালগোরিদম, গ্রাফ ও নেটওয়ার্ক অ্যালগোরিদম, বীজগাণিতিক অ্যালগোরিদম, গুচ্ছবিন্যাসতাত্ত্বিক সর্বোচ্চ অনুকূলীকরণ, এবং তথ্যগুপ্তিবিদ্যা। অ্যালগোরিদম তত্ত্ব অন্যান্য যেসব জ্ঞানের শাখার ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে সেগুলো হল বিচ্ছিন্ন গণিত (যার মধ্যে পড়ে গ্রাফ তত্ত্ব, পৌনঃপুনিক ফাংশন, পুনর্ঘটন সম্পর্কসমূহ, গুচ্ছবিন্যাস তত্ত্ব), ক্যালকুলাস, আরোহী পদ্ধতি, বিধেয় যুক্তিবিজ্ঞান, সময়ভিত্তিক যুক্তিবিজ্ঞান, অর্থবিজ্ঞান, সম্ভাবনা ও পরিসংখ্যান।
[সম্পাদনা] প্রোগ্রামিং ভাষাসমূহ
অ্যালগোরিদম ও উপাত্ত সংগঠনগুলো কম্পিঊটারে বাস্তবায়িত করার জন্য সফ্টওয়্যার প্রকৌশলীরা প্রোগ্রাম রচনা করেন। এই প্রোগ্রামগুলো লিখতে গিয়ে তাঁরা যেসব কৃত্রিম ভাষার সাহায্য নেন, তাদেরকে প্রোগ্রামিং ভাষা বলা হয়। মানুষের মুখের স্বাভাবিক ভাষা দ্ব্যর্থবোধক এবং এ ভাষার পদসংগঠন ও শব্দার্থ বহুভাবে অনুধাবন করা যায়, তাই এটি প্রোগ্রাম লেখার জন্য উপযুক্ত নয়। এর পরিবর্তে সরল ও দ্ব্যর্থহীন কৃত্রিম প্রোগ্রামিং ভাষার আশ্রয় নেয়া হয়। কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা এমন প্রোগ্রামিং ভাষা উদ্ভাবনের চেষ্টা করেন, যা দিয়ে সহজে প্রোগ্রাম লেখা যায় এবং প্রোগ্রামে ভুলের পরিমাণ কম হয়। প্রোগ্রামিং ভাষাগুলোকে যন্ত্রের ভাষায় ভাষান্তরিত করে নিতে হয়, যাতে কম্পিউটার প্রোগ্রামের নির্দেশগুলো পালন করতে পারে। কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা আরও ভাল ভাষান্তরকরণ অ্যালগোরিদম বের করার চেষ্টা করেন, যাতে যন্ত্রের ভাষায় ভাষান্তরিত প্রোগ্রামগুলো আরও দক্ষভাবে সম্পাদন করা যায়।
- উপাত্ত টাইপ, অপারেশন, অপেরান্ড, নিয়ন্ত্রণ কাঠামোসমূহ, সম্প্রসারণযোগ্য ভাষাকৌশল যার সাহায্যে নতুন উপাত্ত টাইপ ও অপারেশন সৃষ্টি করা যায়।
- উচ্চস্তরের ভাষা থেকে মেশিন ভাষায় অনুবাদ, কম্পাইলার, ভাষা প্রক্রিয়াকারক।
- বিমূর্তায়ন, সিনট্যাক্স বা অন্বয়তত্ত্ব, সেমান্টিক্স বা অর্থবিজ্ঞান, প্র্যাগম্যাটিক্স বা প্রয়োগতত্ত্ব।
- ব্যাকরণ, বিধিগত ভাষাসমূহ, স্বয়ংক্রিয়ক তত্ত্ব, টুরিং যন্ত্র, ল্যাম্ডা ক্যালকুলাস, পাই ক্যালকুলাস, বিধেয়মূলক যুক্তিবিজ্ঞান।
- নিয়মিত এক্সপ্রেশন, টাইপ তত্ত্ব, চম্স্কি অনুক্রম
- স্থির টাইপিং, চলমান টাইপিং
- ফাংশনভিত্তিক প্রোগ্রামিং, পদ্ধতিভিত্তিক প্রোগ্রামিং, বস্তুভিত্তিক প্রোগ্রামিং, যুক্তি নির্ধারণ, উপাত্ত ধারা।
[সম্পাদনা] কম্পিউটার স্থাপত্য
কম্পিউটার স্থপতিরা নতুন নতুন কম্পিউটার ব্যবস্থা ডিজাইন ও বিশ্লেষণ করেন। তাঁরা কম্পিউটারের গতি, সংরক্ষণ ক্ষমতা ও নির্ভরযোগ্যতা কীভাবে বাড়ানো যায় এবং খরচ ও শক্তির ব্যবহার কীভাবে কমানো যায়, তা নিয়ে গবেষণা করেন। এ কাজে তাঁরা হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার মডেলের সাহায্য নেন। অনেক ক্ষেত্রেই তাঁরা কম্পিউটার হার্ডওয়্যার প্রকৌশলীদের সাথে মিলে নতুন কম্পিউটার বানানোয় অংশ নেন, কেননা তাদের স্থাপত্য মডেলগুলো অনেকাংশেই কম্পিউটারের বর্তনীবিন্যাসের ওপর নির্ভর করে। অনেক কম্পিউটার স্থপতি বিশেষায়িত প্রয়োগ যেমন ছবি প্রক্রিয়াকরণ, সিগনাল প্রক্রিয়াকরণ, ইত্যাদির জন্য কম্পিউটার ডিজাইন করেন, যাতে বেশি কর্মক্ষমতা, নিম্ন দাম কিংবা উভয়ই সম্ভব হয়।
- ডিজিটাল যুক্তিবিজ্ঞান, বুলিয়ান বীজগণিত, কোডিং তত্ত্ব, সসীম-অবস্থা যন্ত্র তত্ত্ব।
- ক্যাশ স্মৃতি, ভন নিউমান যন্ত্র, রিস্ক, সিস্ক, ত্রুটি চিহ্নিতকারী ও সংশোধনকারী কোড, কম্পিউটার-সহায়িত ডিজাইন,
- পাইপলাইন, বহুপ্রসেসর।
[সম্পাদনা] অপারেটিং ব্যবস্থা ও নেটওয়ার্ক
অপারেটিং ব্যবস্থা হল কম্পিউটারের সার্বিক পরিচালনায় নিয়োজিত প্রোগ্রামসমষ্টি। অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারী ও কম্পিউটারের মধ্যকার যোগসূত্র (interface) প্রদান করে, কম্পিউটারের স্মৃতিতে অন্যান্য প্রোগ্রাম স্থাপন করে এবং কম্পিউটার কীভাবে সেগুলো চালাবে তা দেখাশোনা করে, কম্পিউটারের বিভিন্ন সম্পদ, যেমন - ডিস্ক পরিসর (disk space) ব্যবস্থাপনা করে, অননুমোদিত ব্যবহার থেকে কম্পিউটারকে রক্ষা করে, এবং সংরক্ষিত উপাত্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা কীভাবে অপারেটিং ব্যবস্থা আরও সহজে ব্যবহার করা যায়, সংবেদনশীল উপাত্তের ব্যবহারাধিকার প্রতিরোধ করে কীভাবে অন্যান্য উপাত্ত অংশীদারযোগ্য করা যায়, কীভাবে কম্পিউটারের স্মৃতি ও সময়ের আরও দক্ষ ব্যবহার করা যায়, তার চেষ্টা করেন।
[সম্পাদনা] সফটওয়্যার প্রকৌশল
সফটওয়্যার প্রকৌশলে কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা সঠিক, নির্ভরযোগ্য ও সহজে ভেঙ্গে পড়ে না, এমন প্রোগ্রাম তৈরির পদ্ধতি ও কলাকৌশল নিয়ে গবেষণা করেন। এতে সফটওয়্যারের জীবনচক্রের সমস্ত দশা, যথা - বিধিগত পদ্ধতিতে সমস্যার বিবরণ তৈরি, সমাধানের ডিজাইন তৈরি, প্রোগ্রাম আকারে সমাধানটির বাস্তবায়ন, প্রোগ্রামটির ভুলত্রুটি পরীক্ষা, ও প্রোগ্রামটির রক্ষণাবেক্ষণ - এই সব কিছু আলোচনা করা হয়। সফটওয়্যার প্রকৌশলীরা প্রোগ্রামিং পরিবেশ নামের হাতিয়ার-সংগ্রহ বানিয়ে থাকেন, যার সাহায্যে দ্রুত ও উন্নত উপায়ে প্রোগ্রাম লেখা যায়।
[সম্পাদনা] ডাটাবেস ও তথ্য আনয়ন ব্যবস্থাসমূহ
কীভাবে বিপুল পরিমাণ স্থায়ী ও অংশীদারযোগ্য উপাত্ত সুবিন্যস্ত করা যায়, যাতে এগুলো দক্ষভাবে ব্যবহার করা যায় ও হালনাগাদ করা যায়, তা-ই এই শাখার আলোচ্য। ডাটাবেস (database) হচ্ছে একাধিক রেকর্ডের সমষ্টি যা বিভিন্ন উপায়ে অনুসন্ধান ও হালনাগাদ করা যায়।
তথ্য আনয়ন ব্যবস্থা (information retrieval system) বলতে এক ধরনের ডকুমেন্ট-সমষ্টিকে বোঝায় যে ডকুমেন্টগুলো পরিষ্কারভাবে বিন্যস্ত নয়,অথচ এগুলো থেকে বিভিন্ন ধরনের তথ্য বা উপাত্ত অনুসন্ধান করা প্রয়োজন,যেমন - কোন সংবাদপত্রে প্রকাশিত বহু নিবন্ধের সমষ্টি। কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা এই ডকুমেন্টগুলো থেকে উপাত্তের নির্ঘণ্ট বের করার অ্যালগোরিদম রচনা করেন। নির্ঘণ্ট রচনার পর এগুলো থেকে সহজে উপাত্ত ও তথ্য আনয়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের কৌশল প্রয়োগ করা হয়। তথ্য আনয়ন ব্যাবস্থার সাথে সম্পর্কিত আরেকটি ক্ষেত্র হচ্ছে উপাত্ত খনন (data mining), যেখানে বিপুল পরিমাণ উপাত্তের মধ্য থেকে বিভিন্ন বিন্যাস (pattern) শনাক্ত করার উপায়গুলো বের করা হয়; এই শনাক্তকৃত বিন্যাসগুলো পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে নানা সিদ্ধান্ত গ্রহনে সাহায্য করে।
ডাটাবেস ও আনয়ন ব্যবস্থাসমূহের গবেষণায় যে সমস্ত তত্ত্ব প্রয়োগ করা হয়, তাদের মধ্যে আছে সাম্পর্কিক বীজগণিত (relational algebra), সাম্পর্কিক ক্যালকুলাস (relational calculus), সহবর্তমানতা তত্ত্ব (concurrency theory), ক্রমায়নযোগ্য আদান-প্রদান (serialiable transaction), ডেডলক প্রতিরোধ (deadlock prevention), সময়-সামঞ্জস্যীকৃত হালনাগাদ (synchronized upadte), নিয়ম-ভিত্তিক সিদ্ধান্তগ্রহণ (rule-based inference), বিন্যস্তকরণ (sorting), অনুসন্ধান (searching), নির্ঘণ্ট তৈরিকরণ (indexing), যোগ্যতা বিশ্লেষণ (performance analysis), তথ্যের গোপনীয়তা (information privacy) ও তথ্য ব্যবহারকারীর পরিচয় যাচাইকরণ (authentication)।
উপাত্তের যৌক্তিক গঠন ও বিভিন্ন উপাত্ত উপাদানের মধ্যে সম্পর্ক বোঝার জন্য বিভিন্ন উপাত্ত মডেল ব্যবহার করা হয়, যেমন - বস্তুভিত্তিক, রেকর্ডভিত্তিক ও বস্তু-সাম্পর্কিক।
[সম্পাদনা] প্রাতিষ্ঠানিক তথ্যবিজ্ঞান
প্রতিষ্ঠানের কর্মপ্রক্রিয়ায় এবং প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতায় সহায়তাকারী তথ্যব্যবস্থাসমূহ প্রাতিষ্ঠানিক তথ্যবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়। বিশ্ববাজারে সাফল্য লাভের জন্য যেকোন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে তথ্যব্যবস্থার ব্যবহার অপরিহার্য। যেহেতু প্রাতিষ্ঠানিক কাজকর্ম মানুষেরা করে থাকেন, তাই তথ্যব্যবস্থাসমূহের ডিজাইনের সময় মানুষের কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে গভীর ধারণা থাকা প্রয়োজন। অন্যদিকে কম্পিউটার বিজ্ঞানের নানা তত্ত্ব প্রাতিষ্ঠানিক সুবিন্যস্তকরণ প্রক্রিয়ায় সাহায্য করতে পারে। সিদ্ধান্ত বিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, বাজারজাতকরণ, নৃবিজ্ঞান, বোধনমূলক বিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, প্রাতিষ্ঠানিক গতিবিদ্যা, ইত্যাদি সবই কর্মক্ষেত্রে মানুষের আচরণ অনুধাবনে সহায়তা করে, এবং এই-সংক্রান্ত বেশির ভাগ তত্ত্বই কম্পিউটার মডেল, বিমূর্তায়ন ও সিমুলেশনে ব্যবহার করে পূর্বাভাস বের করতে কাজে লাগানো হয়।
[সম্পাদনা] জীব-তথ্যবিজ্ঞান
এটি কম্পিউটার বিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞানের সমন্বয়ে গঠিত একটি নতুন আন্তঃশাস্ত্রীয় ক্ষেত্র। এই ক্ষেত্রের বিজ্ঞানীরা এমন সব মডেল ও স্থাপত্য নিয়ে কাজ করছেন যেগুলো কম্পিউটিং, জীববিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিপ্লব আনতে পারে। ডিএনএ রসায়ন ব্যবহার করে গুচ্ছবিন্যাসতাত্ত্বিক সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। স্ট্রিং বিশ্লেষক অ্যালগোরিদম ব্যবহার করে মনুষ্য জিনোম প্রকল্পের বিরাট ডাটাবেস খুঁজে খুঁজে বিভিন্ন খণ্ডাংশের সমন্বয়ে মানুষের পূর্ণাঙ্গ জিনোম পাওয়া গেছে। কম্পিউটার স্থাপত্যবিদ ও চিকিৎসকেরা একসাথে বিভিন্ন কৃত্রিম জীব-যান্ত্রিক বা বায়োনিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি করছেন। জিন প্রকৌশলে কম্পিউটার বিশ্লেষণ ব্যবহার করে রোগ প্রতিষেধক এনজাইমের সঠিক রাসায়নিক গঠন বের করা হচ্ছে। এমনকি বর্তমানে কম্পিউটারে ব্যবহৃত স্মৃতির চেয়ে বহুগুণ বেশি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন নতুন ধরনের জৈব স্মৃতি নিয়েও গবেষণা চলছে।
[সম্পাদনা] কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটবিজ্ঞান
মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও ইন্দ্রিয়ের কার্যপদ্ধতি কীভাবে কম্পিউটার ও যন্ত্রের সাহায্যে অনুকরণ করা যায়, তা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শাখার আলোচ্য বিষয়। বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে আমাদের ধারণা আরও উন্নত করার জন্য এই শাখায় মানুষের আচরণের কম্পিউটার মডেল তৈরি করা হয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শাখার বিভিন্ন উপশাখার মধ্যে রয়েছে যন্ত্রের শিক্ষাগ্রহণ (machine learning), সিদ্ধান্তগ্রহণ (inference), বোধন (cognition), জ্ঞানের উপস্থাপন (knowledge representation), সমস্যা সমাধান (problem solving), ঘটনাভিত্তিক যুক্তিপ্রদান (case based reasoning), স্বাভাবিক ভাষা অনুধাবন (natural language understanding), উক্তি শনাক্তকরণ (speech recognition), কম্পিউটার দৃষ্টি (computer vision), কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ক (artificial neural network), ইত্যাদি।
রোবট বা কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রসমূহ ডিজাইন ও উৎপাদন সংক্রান্ত বিদ্যা হল রোবটবিজ্ঞান। খেলনা রোবট কিংবা কারখানায় ব্যবহৃত স্বয়ংক্রিয় পণ্য নির্মাণ ব্যবস্থা - এ সবই রোবটবিজ্ঞানের আওতাভুক্ত। রোবট বানানোর অন্যতম উদ্দেশ্য মানুষকে পুনরাবৃত্তিমূলক, বিপজ্জনক ও কঠোর পরিশ্রমের কাজ থেকে রেহাই দেওয়া এবং যেসব কাজে দ্রুতি, নির্ভুলতা ও পরিচ্ছন্নতা জরুরি, সেগুলো রোবট দিয়ে করিয়ে নেওয়া। রোবটবিজ্ঞানীরা রোবটের ভৌত বিশিষ্ট্য নির্ধারণ, রোবটের কাজের পরিবেশের মডেল বানানো, রোবতের কর্মপন্থা নির্ধারণ, রোবটের যান্ত্রিক কর্মকৌশলের দক্ষতা বৃদ্ধি, রোবটের আচরণ ও মানুষের নিরাপত্তা, ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করেন। তাঁরা রোবট নিয়ন্ত্রক প্রোগ্রাম লেখেন, এই প্রোগ্রাম কীভাবে সরল করা যায় তার চেষ্টা করেন এবং সেন্সরের ব্যবহারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রক প্রোগ্রামের কাছে ফিডব্যাক প্রদানের ব্যবস্থা করেন। তাঁরা রোবটদেরকে দিয়ে কীভাবে মানুষের মত কোন কিছু সুচারুভাবে সম্পাদন করা ও পরিবেশের সাথে মানিয়ে চলার ক্ষমতা অনুকরণ করানো যায়, তা নিয়েও গবেষণা করেন, এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শাখার বিজ্ঞানীদের সাথে এ নিয়ে মিলিতভাবে কাজ করেন।