বিসমিল্লাহ্ খান
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান সাহেব (জন্ম: মার্চ ২১, ১৯১৬ - মৃত্যু: আগস্ট ২১, ২০০৬) একজন ভারতীয় সানাই বাদক। ভারতের উচ্চাঙ্গ শাস্ত্রীয় সঙ্গীত জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম। সানাইকে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত বাদনের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করে এই অমর শিল্পী ভারতের উচ্চাঙ্গ শাস্ত্রীয় সঙ্গীত জগতে ওস্তাদ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পীদের মধ্যে তিনি তৃতীয় যাঁরা ভারতরত্ন পদক পেয়েছেন। তিনি ছিলেন অল্পসংখ্যক গুনীদের মধ্যে একজন যিনি ভারতের চারটি সর্বোচ্চ বেসামরিক পদকে সম্মানিত হয়েছেন।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা] ছোটবেলা
বাবা পয়গম্বর খান ও মা মিঠানের দ্বিতীয় সন্তান ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান সাহেবকে প্রথমে কামরুদ্দিন বলে ডাকা হতো। কিন্তু তাঁর পিতামহ জন্মের পর নবজাতককে দেখে বিসমিল্লাহ বলার পর হতে তাঁর নাম হয়ে যায় বিসমিল্লাহ খান। ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান সাহেবের পূর্বপৃরুষরা বিহারের ডুমরাও রাজ্যের রাজ সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন। ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খানের সঙ্গীত গুরু ছিলেন প্রয়াত আলী বকস্ বিলায়াতু। তিনি ছিলেন বারাণসীর বিশ্বনাথ মন্দিরের সানাই বাদক।
ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান সাহেব ছিলেন অত্যন্ত একজন ধার্মিক শিয়া মুসলমান। তবে তিনি জ্ঞানের দেবী স্বরস্বতীরও পুজা করতেন।
[সম্পাদনা] সঙ্গীত ও জীবন
সানাইকে ভারতের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত জগতের যন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবার একক কৃতিত্ব ভারতের উচ্চাঙ্গ ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান সাহেবের। ১৯৩৭ সালে কলকাতায় অল ইন্ডিয়া মিউজিক কনফারেন্স এ সানাই বাজিয়ে একে ভারতীয় সঙ্গীতের মূল মঞ্চে নিয়ে আসেন। ১৯৫০ সালের ২৬শে জানুয়ারি দিল্লীর লাল কেল্লায় অনুষ্ঠিত ভারতের প্রথম প্রজাতণ্ত্র দিবসে বিসমিল্লাহ খান সাহেব তাঁর অন্তরের মাধুরী ঢেলে রাগ কাফি বাজিয়ে মুগ্দ্ধ করেছিলেন সারা ভারতবর্ষকে।
তাঁর যোগ্যতায় সানাই এবং ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান সাহেব সমার্থবোধক হয়ে গেছে । ভারতীয় দূরদর্শনের ১৫ই অগাষ্টের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে তাঁর সানাই বাদন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গিয়েছল। দিল্লীর লাল কেল্লায় প্রধান মণ্ত্রীর ভাষণের পর পরই ভারতীয় দূরদর্শন সানাই গুরুর অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করতো। পন্ডিত নেহেরুর সময় হতেই এই ঐতিহ্য চলে আসছে।
আফগানিস্তান, ইউরোপ, ইরান, ইরাক, কানাডা, পশ্চিম আফ্রিকা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন, জাপান, হংকং সহ পৃথিবীর প্রায় সকল রাজধানী শহরেই ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান সাহেব তাঁর সঙ্গীত প্রভা ছড়িয়েছেন।
এতো সুনাম ও অর্জন সত্ত্বেও অত্যন্ত সাধারণ জীবন যাপন করতেন খান সাহেব। সবসময়ই ছিলেন বারাণসীর পুরোনো পৃথিবীতে। সাইকেল রিকশাই ছিল তাঁর চলাচলের মূল বাহন। অত্যন্ত অর্ন্তমুখী বিনম্র এই সঙ্গীত গুরু বিশ্বাস করতেন যে সঙ্গীত শোনার বিষয়, দেখার বা দেখাবার নয়।
ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান সাহেব স্বধীনতা উত্তর ভারতের উচ্চাঙ্গ শাস্ত্রীয় সঙ্গীত জগতে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবে অমর হয়ে থাকবেন। ব্যক্তিস্বত্তা হিসেবে তিনি হিন্দু মুসলমান সম্প্রীতির এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন।
[সম্পাদনা] পুরষ্কার ও সম্মাননা
- ভারতরত্ন (২০০১)
- পদ্মবিভূষণ (১৯৮০)
- পদ্মভূষণ (১৯৬৮)
- পদ্মশ্রী (১৯৬১)
- সঙ্গীত নাটক একাডেমী পুরষ্কার (১৯৫৬)
- তানসেন পুরষ্কার, মধ্য প্রদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত
- তালার মৌসিকী, ইরান প্রজাতন্ত্র, ১৯৯২
- সঙ্গীত নাটক একাডেমীর ফেলো (১৯৯৪)
[সম্পাদনা] মর্যাদা সম্মাননা
- সম্মানসূচক ডক্টরেট, বানারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়
- সম্মানসূচক ডক্টরেট, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়
- সম্মানসূচক ডক্টরেট, শান্তি নিকেতন
[সম্পাদনা] চলচ্চিত্রে ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান সাহেব
চলচ্চিত্রে ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান সাহেবের সংয়োগ ছিল অতি সামান্য। সনাদি অপন্যা চলচ্চিত্রের ডা: রাজকুমার চরিত্রের জন্য সানাই বাজিয়েছিলেন। সত্যজিৎ রায়ের জলসাঘর চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এবং গুঞ্জে উঠে সানাই এর অংশে সানাই বাজিয়েছিলেন। শক্তিমান চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান সাহেবের জীবন ও কর্মের ওপর প্রমান্য চিত্র সঙ্গ মিল সে মুলাকাত তৈরী করেন। এতে ওস্তাদ সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন।
[সম্পাদনা] মৃত্যু
সানাইয়ের এই দিকপাল গত ২১ অগাষ্ট ২০০৬ তারিখে বারাণসীর হেরিটেজ হসপিটালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৯০ বছর এবং তিনি পাঁচ পুত্র তিন কণ্যা ও অসংখ্য পৌত্র পুত্রী রেখে গেছেন। ভারত সরকার একদিন ব্যাপী জাতীয় শোক পালন করেছে।
[সম্পাদনা] ওস্তাদের কয়েকটি উল্লখযোগ্য সৃষ্টি
- সনাদি অপন্যা চলচ্চিত্রের ডা: রাজকুমার চরিত্রের জন্য সানাই বাজানো
- গুঞ্জে উঠে সানাই (১৯৫৯) সানাই বাজানো
- মায়েস্ট্রো চয়েস (ফেব্রুয়ারী ১৯৯৪)
- মেঘ মালহার, ভলিয়ুম ৪ (কিশোরী আমনকরের সাথে) (সেপ্টম্বর ১৯৯৪)
- লাইভ এট কুইন এলিজাবেথ হল (সেপ্টেম্বর ২০০০)
- লাইভ ইন লন্ডন, ভলিয়ুম ২ (সেপ্টেম্বর ২০০০)