আনা আখ্মাতোভা
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আনা আখ্মাতোভা (Anna Akhmatova) (১৮৮৯-১৯৬৬) একজন খ্যাতনামা রুশ কবি। তার আসল নাম আনা আন্দ্রেইয়েভ্না গোরেংকো। প্রায় অর্ধ শতাব্দী সময় জুড়ে তিনি রুশ কবিতার সেইন্ট পিটার্স্বার্গ ধারার প্রাণকেন্দ্র ছিলেন। তিনি স্বল্প দৈর্ঘ্যের কবিতা থেকে শুরু করে দীর্ঘ কবিতাচক্র পর্যন্ত লিখেছেন। তার কবিতার বিষয়বস্তু বিবিধ - সময়, স্মৃতি, সৃজনশীল নারীদের পরিণতি, এবং স্টালিনের ত্রাসের রাজত্বের মধ্যে বেঁচে থাকার সংগ্রাম।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা] প্রথম জীবন
তিনি ওডেসার নিকটে বলশোই ফন্টান-এ জন্মগ্রহন করেন। কৈশোরে তার বাবা-মার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। আনা কিয়েভ ও সেইন্ট পিটার্সবার্গে পড়ালেখা করেন। তার প্রিয় কবি রাসিন্, পুশকিন ও বারাতিন্স্কির লেখা পড়ে উদবুদ্ধ হন এবং মাত্র ১১ বছর বয়সে কবিতা লেখা শুরু করেন। তবে তার বাবা নিজ নাম ব্যবহার করতে রাজী না হওয়ায় তিনি তার এক তাতার পূর্বপুরুষের নাম বেছে নেন - আখ্মাতোভা।
১৯১০ সালে তিনি নবীন কবি নিকোলাই গুমিল্ইয়োভ-কে বিয়ে করেন। কিন্তু গুমিল্ইয়োভ স্ত্রীকে তেমন সময় দিতেন না। বরঞ্চ তিনি চলে যেতেন দেশ বিদেশ সফরে। এ ছাড়াও তিনি আখমাতোভার প্রতিভাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন না। কিন্তু আলেক্সান্দ্র ব্লক মতামত দেন যে তিনি আখমাতোভার কবিতাকেই বেশী পছন্দ করেন! ১৯১২ সালে নিকোলাই ও আনার ছেলে লেভ্-এর জন্ম হয়।
[সম্পাদনা] রৌপ্য যুগের মধ্যমণি
তার প্রথম কবিতার বই সন্ধ্যা প্রকাশিত হয় ১৯১২ সালে। ছোট পরিসরের হলেও কবিতাগুলো মনস্তাত্বিক দিক থেকে তীক্ষ্ণ, অনেকটা ইংরেজ কবি টমাস হার্ডির কবিতার মতো। সন্ধ্যা গ্রন্থটি সমালোচকদের প্রশংসা লাভ করে। বছর দুই পরে যখন তার দ্বিতীয় বই তসবীহ প্রকাশিত হয়, ততদিনে হাজার হাজার মহিলা কবি 'আখমাতোভার মতো' কবিতা লেখা শুরু করে দিয়েছেন। নারী-পুরুষের প্রেমের সবচেয়ে দোদুল্যমান, মর্মভেদী মুহুর্তগুলোকে নিয়ে লেখা তার এ সময়ের কবিতা ব্যাপক ভাবে অনুকরণ করা হয়। আখমাতোভা উক্তি করেন 'আমাদের দেশের নারীদের আমি বলতে শিখিয়েছি কিন্তু তাদের চুপ করা শিখাতে পারিনি।'
রুশ কবিতার এই অধ্যায়টিকে রৌপ্য যুগ আখ্যা দেয়া হয়ে থাকে। আখমাতোভা তার আভিজাত্য ও শৈল্পিক সততার জন্যে 'নেভা-র রানী' এবং 'রৌপ্য যুগের মধ্যমণি' নামে অভিহিত হন।
[সম্পাদনা] টানা পোড়েনের সময়
১৯২১ সালে সোভিয়েত বিরোধী কার্যকলাপের দায়ে নিকোলাই গুমিল্ইয়োভ-কে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। কিছুকাল পরে আনা পুনরায় বিয়ে করেন। প্রথমে আসিরীয় বিশেষজ্ঞ ভ্লাদিমির শিলেইকো-কে, তারপর আরেক গবেষক নিকোলাই পুনিন-কে। পুনিনও স্টালিনের ক্যাম্পে প্রাণ হারান। বিখ্যাত সাহিত্যিক বরিস পাস্তের্নাক বিবাহিত হলেও কয়েকবার আনাকে প্রস্তাব দেন, কিন্তু আনা প্রতিবারই তাকে প্রত্যাখ্যান করেন।
১৯২৫ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত স্টালিন সরকার আখ্মাতোভাকে কার্যত স্তব্ধ করে রাখে। এ সময়ে তিনি নিজের কবিতা প্রকাশ করতে পারতেন না। বিদেশী কবিতা অনুবাদ করে তিনি জীবিকা নির্বাহ করেন। পুশকিনের উপর কিছু অসামান্য রচনাও লিখেন গবেষনাধর্মী সাহিত্য সাময়িকীর জন্যে। তার সমস্ত বন্ধুরা হয় স্টালিন কর্তৃক নির্যাতিত হন নয়তো বিদেশে পাড়ি জমান।
১৯৪০ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামার মধ্যে আখমাতোভার একটি কবিতাগ্রন্থ প্রকাশনার অনুমতি পায়। লেনিনগ্রাদের লোমহর্ষক অবরোধ (Siege of Leningrad) তিনি স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেন। তার দেশাত্মবোধক কবিতা দৈনিক প্রাভ্দা-র প্রথম পাতায় ছাপা হয়। ১৯৪৪ সালে তিনি যখন মধ্য এশিয়া থেকে আবার লেনিনগ্রাদে ফিরে আসেন, তার মনে হয় যে তার প্রিয় শহর ভূতুড়ে রূপ ধারন করেছে।
১৯৪৬ সালে দার্শনিক আইসেইয়াহ বার্লিন তার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। স্টালিনের সহোচর জ্দানোভ এ কথা জানতে পেরে আখমাতোভাকে গালি দেন 'আধা বেশ্যা, আধা সন্ন্যাসিনী' বলে। তার সমস্ত কবিতার উপর নিষোধাজ্ঞা বলবত করা হয়। পুত্র লেভ্ গুলাগ ক্যাম্পে কারাদন্ড ভোগ করেন। আখমাতোভা ছেলের মুক্তির জন্যে স্টালিনের উদ্দেশ্যে কিছু স্তুতিমূলক কবিতা পর্যন্ত লিখেন। তার পরেও স্টালিনের সাথে তার সম্পর্ক সংকটময় থেকেই যায়।
[সম্পাদনা] শেষ জীবন
১৯৫৩ সালে স্বৈরাচারী স্টালিন মারা যান, এবং রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের কিছুটা লাঘব হয়। রুশ কবিদের মধ্যে আখমাতোভার শ্রেষ্ঠত্ব কমিউনিস্ট পার্টির হর্তা-কর্তারাও মেনে নিতে বাধ্য হন। কোমারোভো-তে অবস্থিত তার বাড়িতে জোসেফ ব্রডস্কি সহ নতুন প্রজন্মের অন্যান্য কবিদের তখন নিয়মিত আনাগোনা। সেইন্ট পিটার্স্বার্গের কবিতার ঐতিহ্যকে এরাই বাঁচিয়ে রাখেন। প্রখ্যাত মার্কিন কবি রবার্ট ফ্রস্ট-ও ১৯৬২ সালে তাকে দেখতে কোমারোভো-তে যান।
১৯৬৫ সালে রুশ সরকার আখমাতোভা-কে বিদেশ ভ্রমনের অনুমতি দেয়। তিনি ইতালির সিসিলি দ্বীপ ও ইংল্যান্ড সফর করেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সন্মানসূচক ডক্টোরেট খেতাবে ভূষিত করে। এ সময় তার ভ্রমনসঙ্গিনী ছিলেন লিডিয়া চুকোভ্স্কায়া যিনি আজীবন আনার বন্ধু এবং সেক্রেটারী ছিলেন।
১৯৬৬ সালের মার্চ মাসে আখমাতোভা মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর সাহিত্যজগতে তার নামযশ ক্রমশই বৃদ্ধি পায়। ১৯৮৯ সালে তার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তার সুবিখ্যাত কবিতা রিকুইয়েম (Requiem) অবশেষে রাশিয়াতে মুক্তি লাভ করে। রিকুইয়েম বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বিয়োগাত্মক কবিতাগুলোর অন্যতম বলে পরিগণিত।
বিশের দশক থেকে ১৯৫২ পর্যন্ত আখমাতোভা মস্কোর যে বাড়িতে বসবাস করতেন, বর্তমানে সেখানে তার স্মরনে একটি যাদুঘর তৈরী করা হয়েছে।
ক্লাসিসিজম (১৭০০-১৮০০): আন্তিয়োখ দ্মিত্রিয়েভিচ কান্তেমির - ভাসিলি কিরিল্লভিচ ত্রেদিয়াকোভ্স্কি - মিখাইল ভাসিলিয়েভিচ লমনোসভ - আলেক্সান্দ্র পেত্রোভিচ সুমারোকভ - গাভ্রিলা রমানভিচ দেজার্দিন
জ্ঞানবাদী বাস্তবতা (১৭০০-১৮০০): দেনিস ইভানভিচ ফন্ভিজিন - আলেক্সান্দ্র রাদিশ্শ্যেভ - ইভান আন্দ্রেইয়েভিচ ক্রিলোভ সেন্টিমেন্টালিজম: নিকলাই মিখাইলভিচ কারাম্জিন রোমান্টিসিজম: ভাসিলি আন্দ্রেইয়েভিচ জ্কোভ্স্কি - কন্দ্রাতি ফিয়োদরভিচ রিলেইয়েভ - আলেক্সাদ্র সের্গেইয়েভিচ গ্রিবইয়েদভ - আলেক্সাদ্র সের্গেইয়েভিচ পুশ্কিন - মিখাইল য়্যুরিয়েভিচ ল্যের্মন্তভ - নিকলাই ভাসিলিয়েভিচ গোগল - আলেক্সেই ভাসিলিয়েভিচ কল্ৎসোভ - আলেক্সান্দ্র নিকলায়েভিচ অস্ত্রোভ্স্কি প্রকৃতিবাদ: ভিস্সারিওন বেলিন্স্কি - ইভান সের্গেইয়েভিচ তুর্গ্যেনেভ - ইভান আলেক্সান্দ্রভিচ গন্চারভ - আলেক্সান্দ্র ইভানভিচ হের্ৎসেন - নিকলাই আলেক্সেইয়েভিচ নেক্রাসভ কলাকৈবল্যবাদ: ফিয়োদর ইভানভিচ ত্যুত্চেভ - আফানাসি আফানাসিয়েভিচ ফ্যেত সমালোচনা সাহিত্য: নিকলাই গাভ্রিইলাভিচ চের্নিশ্যেভ্স্কি - নিকলাই আলেক্সান্দ্রভিচ দব্রল্যুবোভ - দ্মিত্রি ইভানভিচ পিসারেভ - মিখাইল ইয়েভ্গ্রাফভিচ সাল্তিকোভ শ্চেদ্রিন বিচারমূলক বাস্তবতা: ফিয়োদর মিখাইলভিচ দস্তইয়েভ্স্কি - ল্যেভ্ নিকলাইয়েভিচ তল্স্তোয় - আন্তন পাভ্লভিচ চ্যেখভ সমাজতান্ত্রিক বাস্তবতা: মাক্সিম গোর্কি - আলেক্সান্দ্র ইভানভিচ কুপ্রিন - ইভান আলেক্সেইয়েভিচ বুনিন - আলেক্সেই নিকলাইয়েভিচ তল্স্তোয় আধুনিকতাবাদ: লেয়োনিদ নিকলাইয়েভিচ আন্দ্রেইয়েভ প্রতীকবাদ: ভাল্যেরি ইয়াকভ্লেভিচ ব্র্যুসভ - ভিয়াচেস্লাভ ইভানভ - আন্দ্রেই বিয়েলি - আলেক্সান্দ্র আলেক্সান্দ্রভিচ ব্লক চূড়ান্তবাদ: নিকলাই স্তেপানভিচ গুমিলিয়োভ - ওসিপ্ য়েমিলিয়েভিচ মান্ডেল্স্টাম - আন্না আন্দ্রেইয়াভ্না আখ্মাতভা- ইমেজইজম: সের্গেই আলেক্সান্দ্রভিচ য়েস্যেনিন ভবিষ্যৎবাদ: ভিক্তর ভ্লাদিমিরভিচ খ্লেব্নিকভ - ভ্লাদিমির ভ্লাদিমিরভিচ মায়াকোভ্স্কি - মারিনা ইভানভ্না ত্সভেতায়েভা - বরিস লেয়োনিদভিচ পাস্তের্নাক প্রাথমিক সোভিয়েত সাহিত্য: নিকলাই আসেইয়েভ - নিকলাই তিখ্নভ গঠনবাদ: ইলিয়া সেল্ভিন্স্কি - এদুয়ার্দ বাআইজাক-ভ্লাদিমির আলেক্সান্দ্রভিচ লুগোভ্স্কোয় - পাভেল গ্রিগরিয়ভিচ আন্তকোল্স্কি - প্রলেতারীয়: দেমিয়ান বিয়েদ্নি - ইওসিফ পাভ্লভিচ উৎকিন - মিখাইল স্ভেৎলোভ - আলেক্সান্দ্র আন্দ্রেইয়েভিচ প্রকোফিয়েভ - মিখাইল ভাসিলিয়েভিচ ইসাকোভ্স্কি - আলেক্সেই আলেক্সান্দ্রভিচ সুরকোভ - স্তেপান পেত্রোভিচ শ্চিপাচোভ - ইলিয়া গ্রিগোরিয়েভিচ এলেনবুর্গ আইজাক বাবেল - আলেক্সান্দ্র সল্ঝেনিত্সিন - জোসেফ ব্রডস্কি - বরিস আকুনিন - - ভার্লাম শালামভ - ভাসিলি গ্রস্ম্যান - ভ্লাদিমির নাবোকভ্ - মিখাইল বুল্গাকভ্ - মিখাইল লের্মোন্তোভ্ - মিখাইল শলোখভ্ |