খালেদ মোশাররফ
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
খালেদ মোশাররফ (১৯৩৮-১৯৭৫) একজন বাঙ্গালী মুক্তিযোদ্ধা ও সামরিক বাহিনীর অফিসার। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে খালেদ ২ নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার এবং 'কে-ফোর্স'-এর সর্বাধিনায়ক ছিলেন। বীরত্বের জন্য তাঁকে বীর উত্তম পদক দেওয়া হয়। ১৯৭৫ সালের নভেম্বর ৩ তারিখে তিনি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন। এর মাত্র ৩ দিন পরে ৭ নভেম্বর তারিখে তিনি এক পাল্টা অভ্যুত্থানে নিহত হন।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা] জন্ম
খালেদ মোশাররফ জামালপুর জেলার ঊসমানপুর থানার মোশাররফগঞ্জ গ্রামে ১৯৩৮ সালে জন্ম গ্রহণ করেন।
[সম্পাদনা] পরিবার
ভাই রাশেদ মোশাররফ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর পক্ষে নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্য হয়েছেন।
[সম্পাদনা] শিক্ষা
তিনি কক্সবাজার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৫৩ সালে মেট্রিক পাশ করেন এবং ১৯৫৫ সালে ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমেডিয়েট পাশ করেন। অতঃপর তিনি কেকুল মিলিটারি একাডেমীতে যোগ দেন।
[সম্পাদনা] সেনাবাহিনীতে মোশাররফ
১৯৫৭ সালে সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভের পর, প্রায় আট বছর (১৯৫৭-১৯৬৫) তিনি বিভিন্ন সেনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ লাভ করেন। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের সময় খালেদ মোশাররফ চতুর্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টের এডজুডেন্ট হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। যুদ্ধের পর তিনি কেকুল মিলিটারি একাডেমীতে প্রশিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। সেখান থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করার পর তিনি মেজর হিসেবে পদন্নোতি লাভ করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি কোয়েটা স্টাফ কলেজ থেকে পি.এস.সি. ডিগ্রি লাভ করেন এবং তাকে বিগ্রেড মেজর হিসেবে খারিয়াতে ৫৭- বিগ্রেডে নিয়োগ দেওয়া হয়। তার যখন জার্মান ও লন্ডনে মিলিটারি প্রশিক্ষণে যাওয়া কথা, তখন ১৯৭০ সালের মার্চে তাকে ঢাকা বদলি করা হয়।
[সম্পাদনা] মুক্তিযুদ্ধ
২৪ মার্চ ১৯৭১ সালে খালেদ মোশাররফকে কুমিল্লাতে চতুর্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টের দ্বায়িত্ব প্রদান করা হয়। ২৭ মার্চ তিনি তার বাহিনীকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংগঠিত করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তিনি চতুর্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসারের দ্বায়িত্ব নেন এবং অবাঙ্গালি অফিসারদের বন্দি করেন। পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি তার বাহিনীর অফিস ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে তেলিপাড়া চা বাগানে সরিয়ে নেন।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সফল প্রতিরোধ করতে করতে মধ্য এপ্রিলে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবিরাম বিমান আক্রমনের শিকার হন, ফলে তিনি ত্রিপুরা রাজ্যে অবস্থান নেন। মুজিবনগর সরকার তাকে ২ নং সেক্টরের দ্বায়িত্ব দেয়। যুদ্ধের সময় খালেদ মোশাররফ লেফটেনেন্ট কর্ণেলের পদে উন্নিত হন। ২৩ অক্টোবর খালেদ মোশাররফ মাথায় গুলি লেগে মারাত্বক আহত হন এবং লক্ষ্ণৌ মিলিটারি হাসপাতালে দীর্ঘ চিকিৎসা লাভের পর সুস্থ হন।
[সম্পাদনা] মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তি সময়
যুদ্ধের পর খালেদ মোশাররফ ঢাকা সেনা সদর দপ্তরে স্টাফ অফিসার হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। পরে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চীফ জেনারেল স্টাফ হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য বাংলাদেশ সরকার ১৯৭২ সালে খালেদ মোশাররফকে বীর উত্তম উপাধীতে ভূষিত করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারে নিহত হবার পর, ৩ নভেম্বর, ১৯৭৫ সালে একটি সামরিক অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেন। ঐ সময় তিনি সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করেন। ঠিক তিন দিন পর ৭ নভেম্বর আরেকটি পাল্টা অভ্যুত্থানে তিনি নিহন হন।
[সম্পাদনা] সূত্র
- বাংলাপেডিয়া