বাংলাদেশ
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
|
|||||
নীতি বাক্য: নাই | |||||
জাতীয় সঙ্গীত: আমার সোনার বাংলা | |||||
![]() |
|||||
রাজধানী | ঢাকা | ||||
বড় শহর | ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল | ||||
রাষ্ট্রভাষা | বাংলা (Bengali) | ||||
সরকার | সংসদীয় গণতন্ত্র ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ফখরুদ্দীন আহমদ (প্রধান উপদেষ্টা: তত্ত্বাবধায়ক সরকার) |
||||
স্বাধীনতা - ঘোষিত - বিজয় দিবস |
পাকিস্তান হতে মার্চ ২৬, ১৯৭১ ডিসেম্বর ১৬, ১৯৭১ |
||||
ভূখন্ড - মোট - পানি (%) |
১৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার; (৯১তম) ৫৬,৯৭৭ বর্গ মাইল ৭.০% |
||||
জনসংখ্যা - ২০০৫ হিসাবে - জনসংখ্যার ঘনত্ত্ব |
১৪৪,৩১৯,৬২৮ (৭ম)
|
||||
জিডিপি (পিপিপি) - মোট - প্রতি এককে |
২০০৫ $২৮০ বিলিয়ন (৩২তম) $২০১১ (১৪৩তম) |
||||
মানব উন্নয়ন সূচক (২০০৩) | ০.৫২০ (১৩৯তম) – মধ্যম | ||||
মুদ্রা | টাকা (বিডিটি (BDT) ) |
||||
সময় স্থান | বিডিটি (ইউটিসি+৬) | ||||
ইন্টারনেট ডোমেইন | .bd (.বিডি) | ||||
দেশের কোড | +৮৮০ |
||||
জাতীয়তা | বাংলাদেশী
|
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি রাষ্ট্র। দেশটির উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিম সীমানায় ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব সীমানায় মায়ানমার; দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। বাংলাদেশ ও ভারতীয় অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গ একত্রে একটি বাংলাভাষী অঞ্চল গঠন করেছে, যার ঐতিহাসিক নাম “বঙ্গ” বা “বাংলা”।
১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগের সময় পাকিস্তানের পূর্ব অংশ (পূর্ব পাকিস্তান) হিসেবে বাংলাদেশের সীমানা নির্ধারিত হয়। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যবর্তী দূরত্ব ছিল প্রায় ১৬০০ কিমি (১০০০ মাইল)। দুই পাকিস্তানের লোকের ধর্ম (ইসলাম) এক হলেও তাদের মধ্যে জাতিগত ও ভাষাগত ব্যাপারে ছিল বিরাট অমিল। আর পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থিত সরকারের অনীহায় এই অমিল প্রকটতর রূপ পায়, যার চূড়ান্ত পরিণতিতে ১৯৭১ সালে ভারতের সমর্থন নিয়ে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী বছরগুলো রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলায় পরিপূর্ণ; এ সময় দেশটিতে তেরোবার রাষ্ট্রপরিচালনার রদবদল হয়, আর সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে কমপক্ষে চারবার।
বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। কিন্তু আয়তনের হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বে ৯৩তম, ফলে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। মুসলমান-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৪র্থ, যদিও বাংলাদেশের মুসলমানেরা ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমানদের চেয়ে সংখ্যায় কম । গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্রের উর্বর অববাহিকায় অবস্থিত এই দেশটিতে প্রতিবছর মৌসুমী বন্যা হয়, আর ঘূর্ণিঝড়ও খুব সাধারণ ঘটনা। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্ক ও বিম্সটেক-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। এছাড়া দেশটি ওআইসি ও ডি-৮ এরও সদস্য।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা] ইতিহাস
এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: বাংলাদেশের ইতিহাস

ওয়ারী-বটেশ্বর অঞ্চলে ২০০৬ সালে প্রাপ্ত পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন অনুযায়ী বাংলাদেশ অঞ্চলে জনবসতি গড়ে উঠেছিলো প্রায় ৪ হাজার বছর আগে। ধারণা করা হয় দ্রাবিড় ও তিব্বতীয়-বর্মী জনগোষ্ঠী এখানে সেসময় বসতি স্থাপন করেছিল। পরবর্তীতে এই অঞ্চলটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত হয় এবং স্থানীয় ও বিদেশী শাসকদের দ্বারা শাসিত হতে থাকে। আর্য জাতির আগমনের পর খ্রিস্টীয় চতুর্থ হতে ষষ্ঠ শতক পর্যন্ত গুপ্ত রাজবংশ বাংলা শাসন করেছিল। এর ঠিক পরেই শশাঙ্ক নামের একজন স্থানীয় রাজা স্বল্প সময়ের জন্য এ এলাকার ক্ষমতা দখল করতে সক্ষম হন। প্রায় একশ বছরের অরাজকতার (যাকে মাৎসন্যায় পর্ব বলে অভিহিত করা হয়) শেষে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পাল রাজবংশ বাংলার অধিকাংশের অধিকারী হয়, এবং পরবর্তী চারশ বছর ধরে শাসন করে। এর পর হিন্দু ধর্মাবলম্বী সেন রাজবংশ ক্ষমতায় আসে। দ্বাদশ শতকে সুফি ধর্মপ্রচারকদের হাতে বাংলায় ইসলামের প্রবর্তন ঘটে। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে সামরিক অভিযান এবং যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে মুসলিম শাসকেরা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। ১২০৫ - ১২০৬ সালের দিকে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বখতিয়ার খলজী নামের একজন তুর্কী বংশোদ্ভূত সেনাপতি রাজা লক্ষ্মণ সেনকে পরাজিত করে সেন রাজবংশের পতন ঘটান। ষোড়শ শতকে মোঘল সাম্রাজ্যের অধীনে আসার আগে পর্যন্ত বাংলা স্থানীয় সুলতান ও ভূস্বামীদের হাতে শাসিত হয়। মোঘল বিজয়ের পর ঢাকায় বাংলার রাজধানী স্থাপিত হয় এবং এর নামকরণ করা হয় জাহাঙ্গীর নগর।

বাংলায় ইউরোপীয় ব্যবসায়ীদের আগমন ঘটে পঞ্চদশ শতকের শেষভাগ থেকে। ধীরে ধীরে তাদের প্রভাব বাড়তে থাকে। ১৭৫৭ খ্রীস্টাব্দে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পলাশীর যুদ্ধে জয়লাভের মাধ্যমে বাংলার শাসনক্ষমতা দখল করে (Baxter [১] , pp. 23—28)। ১৮৫৭ খ্রীস্টাব্দের সিপাহী বিপ্লবের পর কোম্পানির হাত থেকে বাংলার শাসনভার ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে আসে। ব্রিটিশ রাজার নিয়ন্ত্রণাধীন একজন ভাইসরয় প্রশাসন পরিচালনা করতেন। (Baxter[১], pp.30—32) ঔপনিবেশিক শাসনামলে ভারতীয় উপমহাদেশে বহুবার ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এর মধ্যে ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত ১৭৭০ খ্রীস্টাব্দের দুর্ভিক্ষে আনুমানিক ৩০ লাখ লোক মারা যায়।[২]
১৯০৫ হতে ১৯১১ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত বঙ্গভঙ্গের ফলশ্রুতিতে পূর্ববঙ্গ ও আসামকে নিয়ে একটি নতুন প্রদেশ গঠিত হয়েছিল, যার রাজধানী ছিল ঢাকায়। (Baxter[১], pp. 39—40) তবে কলকাতা-কেন্দ্রিক রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের চরম বিরোধিতার ফলে বঙ্গভঙ্গ রদ হয়ে যায় ১৯১১ সালে। ভারতীয় উপমহাদেশের দেশভাগের সময় ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে আবার বাংলা প্রদেশটিকে ভাগ করা হয়। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অংশ হয়, আর মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানের অংশ হয়। ১৯৫৪ সালে পূর্ববঙ্গের নাম পাল্টে পূর্ব পাকিস্তান করা হয়। [৩]
১৯৫০ খ্রীস্টাব্দে ভূমি সংস্কারের অধীনে জমিদার ব্যবস্থা রদ করা হয়।(Baxter[১], p. 72) কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ও জনসংখ্যাগত গুরুত্ব সত্ত্বেও পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনী পশ্চিম পাকিস্তানীদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রনে ছিল। ১৯৫২ খ্রীস্টাব্দের ভাষা আন্দোলন পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে সংঘাতের প্রথম লক্ষণ হিসাবে প্রকাশ পায়। (Baxter[১], pp. 62—63) পরবর্তী দশক জুড়ে কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়ে নেয়া নানা পদক্ষেপে পূর্ব পাকিস্তানে বিক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে। এসময় বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা হিসাবে আওয়ামী লীগের উত্থান ঘটে, এবং দলটি বাঙালি জাতির প্রধান রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি ৬ দফা আন্দোলনের সূচনা ঘটে। আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৬৬ সালে কারাবন্দী করা হয়। ১৯৬৯ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার মাধ্যমে আবার তাঁকে বন্দী করা হয়, কিন্তু উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের ফলে আইয়ুব খানের সামরিক জান্তার পতন ঘটে ও মুজিব মুক্তি পান।
১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে এক ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে পূর্ব পাকিস্তানের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ৫ লাখ লোকের মৃত্যু ঘটে। কিন্তু পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার অসহযোগিতা অব্যাহত রাখে। ১৯৭০ সালের সংসদীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলেও সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানায়। (Baxter[১], pp. 78—79) মুজিবের সাথে গোলটেবিল বৈঠক সফল না হওয়ার পর জেনারেল ইয়াহিয়া খান ২৫শে মার্চ গভীর রাতে মুজিবকে গ্রেপ্তার করেন এবং পাকিস্তানী সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চলাইটের অংশ হিসাবে বাঙালিদের উপর নির্বিচারে আক্রমণ শুরু করে। [৪] পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর এই নারকীয় হামলাযজ্ঞে বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণহানি ঘটে[৫] সেনাবাহিনী ও তার স্থানীয় দালালদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল বুদ্ধিজীবী ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। প্রায় ১ কোটি মানুষ শরণার্থী হয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। (LaPorte [৬] , p. 103) বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মোট জীবনহানির সংখ্যার হিসাব কয়েক লাখ হতে শুরু করে ৩০ লাখ পর্যন্ত অনুমান করা হয়েছে। [৭] [৮] আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাঁরা ১৭ই এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আমবাগানে অস্থায়ী সরকার গঠন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলে দীর্ঘ ৯ মাস। মুক্তি বাহিনী ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ভারতের সহায়তায় ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে জয়লাভ করে। মিত্রবাহিনী প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তান বাহিনীর প্রধান জেনারেল নিয়াজী আত্মসমর্পন করেন। প্রায় ৯০,০০০ পাকিস্তানী সেনা যুদ্ধবন্দী হিসাবে ধরা পড়ে, যাদেরকে ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হয়। [৯]
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ প্রথমে সংসদীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থা চালু হয় ও শেখ মুজিব প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ সালের সংসদীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালে দেশব্যাপী দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়।[২] ১৯৭৫ সালের শুরুতে মুজিব দেশে বাকশালের অধীনে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সেনাবাহিনীর কিয়দংশ ও কিছু রাজনীতিবিদের ষড়যন্ত্রে সংঘটিত অভ্যুত্থানে মুজিব সপরিবারে নিহত হন। [১০] পরবর্তী ৩ মাসে একাধিক অভ্যুত্থান ও পাল্টা-অভ্যুত্থান চলতে থাকে, যার সমাপ্তিতে জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসেন। জিয়া বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরায় প্রবর্তন করেন এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮১ খ্রীস্টাব্দে জিয়া আরেকটি অভ্যুত্থানে নিহত হন। [১০] ১৯৮২ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশের পরবর্তী শাসক জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ রক্তপাতবিহীন এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন। এরশাদ স্বৈরশাসক হিসাবে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত শাসন করেন। ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানে তার পতনের পর সংসদীয় গণতন্ত্র পুনরায় চালু হয়। জিয়ার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেত্রী হিসাবে ১৯৯১ হতে ১৯৯৬ ও ২০০১ হতে ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ হতে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ক্ষমতায় ছিলেন। দরিদ্রতা ও দুর্নীতির মাঝেও বাংলাদেশ বর্তমানে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে তার অবস্থান বজায় রেখেছে।
[সম্পাদনা] সরকার ব্যবস্থা
বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থার সরকার পদ্ধতি প্রচলিত। রাষ্ট্রপতি এদেশের রাষ্ট্রপ্রধান, তবে তাঁর ক্ষমতা সীমিত। মূল ক্ষমতার অধিকারী হলেন প্রধানমন্ত্রী, যিনি সরকার প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। জাতীয় সংসদের সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রিপতি নির্বাচিত হন পাঁচ বছর পর পর। তবে সংসদ নির্বাচনের সময় কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে রাষ্ট্রপতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯৬ সালে গৃহীত এই কেয়ারটেকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় সংসদীয় নির্বাচনের সময় সরকারী ক্ষমতা নিয়ন্ত্রিত হয় নির্দলীয় নিরপেক্ষ উপদেষ্টা মন্ডলীর মাধ্যমে। সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। [১১]
প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই সংসদ সদস্য হতে হয়। মন্ত্রীসভার মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক নির্ধারিত, এবং রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। মন্ত্রীদের মন্ত্রণালয়ে স্থায়ী সচিব থাকেন। সচিবেরা দেশের স্থায়ী কর্মচারী। বাংলাদেশের ৩০০ টি আসনের জাতীয় সংসদ এক কক্ষ বিশিষ্ট; এর সদস্যরা জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন। প্রতিটি সংসদের মেয়াদ সর্বোচ্চ ৫ বছর। ১৮ বছর বা তার চেয়ে বয়সে বড় সব নাগরিকের ভোটাধিকার রয়েছে।
বাংলাদেশের সংবিধান ১৯৭২ সালে প্রণীত হয়। পরবর্তীতে এর সর্বমোট ১৩টি সংশোধন করা হয়েছে।[১১] সুপ্রিম কোর্ট বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত । এর প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারকদেরকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিয়ে থাকেন। দেশের আইনকানুন অনেকটা প্রচলিত ইংরেজ আইনের আদলের, তবে বিবাহ এবং উত্তরাধিকার সংক্রান্ত আইনগুলো ধর্মভিত্তিক।
বাংলাদেশের প্রধান দুইটি রাজনৈতিক দল হল আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এছাড়া জাতীয় পার্টি এবং জামায়াতে ইসলামী ও রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
[সম্পাদনা] ভূগোল ও জলবায়ু
এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: বাংলাদেশের ভূগোল
দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘতম দুটি নদ - গঙ্গা আর ব্রহ্মপুত্র যেখানে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে সেখানেই কালের পরিক্রমায় গড়ে ওঠা বঙ্গীয় ব-দ্বীপ। এই গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র মোহনা অঞ্চলে প্রায় ৩০০০ বছর বা তারও পূর্ব থেকে যে জনগোষ্ঠীর বসবাস, তা-ই ইতিহাসের নানান চড়াই উতরাই পেরিয়ে এসে দাড়িয়েছে বর্তমানের স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ রূপে।ভৌগলিক বিচারে বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিন এশিয়ায়, ভারত ও মিয়ানমারের মাঝখানে। এর ভূখন্ড ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। বাংলাদেশের পশ্চিম, উত্তর, আর পূর্ব জুড়ে রয়েছে ভারত। পশ্চিমে রয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য। উত্তরে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয় রাজ্য। পূবে আসাম, ত্রিপুরা, মিজোরাম। তবে পূবে ভারত ছাড়াও মিয়ানমারের (বার্মা) সাথে সীমান্ত রয়েছে। দক্ষিনে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। বাংলাদেশের স্থল সীমান্তরেখার দৈর্ঘ্য ৪,২৪৬ কিলোমিটার যার ৯৪ শতাংশ (৯৪%) ভারতের সাথে এবং বাকী ৬ শতাংশ মিয়ানমারের সাথে। বাংলাদেশের তটরেখার দৈর্ঘ্য' ৫৮০ কিলোমিটার। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশের কক্সবাজার পৃথিবীর দীর্ঘতম সমূদ্র সৈকতগুলোর অন্যতম।
বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকা সমূদ্র সমতল হতে মাত্র ১০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। সমূদ্র সমতল মাত্র ১ মিটার বৃদ্ধি পেলেই এদেশের ১০% এলাকা নিমজ্জিত হবে বলে ধারণা করা হয়। [১২] বাংলাদেশের উচ্চতম স্থান দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে পার্বত্য চট্টগ্রাম এর মোডক পর্বত, যার উচ্চতা ১,০৫২ মিটার (৩,৪৫১ ফুট)।[১৩] বঙ্গোপসাগর উপকূলে অনেকটা অংশ জুড়ে সুন্দরবন অবস্থিত, যা বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন। এখানে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল বাঘ, চিত্রল হরিন সহ নানা ধরনের প্রাণীর বাস। ১৯৯৭ সালে এই এলাকাকে বিলুপ্তির সম্মুখীন বলে ঘোষণা দেয়া হয়। [১৪]
বাংলাদেশের জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ। আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপর ভিত্তি করে ৬টি ঋতুতে ভাগ করা হয়েছে-গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত। বছরে বৃষ্টিপাতের মাত্রা ১৫০০-২৫০০মি.মি./৬০-১০০ইঞ্চি; পূর্ব সীমান্তে এই মাত্রা ৩৭৫০ মি.মি./১৫০ইঞ্চির বেশী। বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা ২৫o সেলসিয়াস। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে কর্কটক্রান্তি অতিক্রম করেছে। এখানকার আবহাওয়াতে নিরক্ষিয় প্রভাব দেখা যায়। নভেম্বর হতে মার্চ পর্যন্ত হালকা শীত অনুভূত হয়। মার্চ হতে জুন মাস পর্যন্ত গ্রীষ্ম কাল চলে। জুন হতে অক্টোবর পর্যন্ত চলে বর্ষা মৌসুম। এসময় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, ও জলোচ্ছাস প্রায় প্রতিবছরই বাংলাদেশে আঘাত হানে।
[সম্পাদনা] প্রশাসনিক বিভাজন
এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: বাংলাদেশের প্রশাসনিক অঞ্চল
বাংলাদেশ ৬টি প্রশাসনিক বিভাগে বিভক্ত।[১৫] এগুলো হলঃ
প্রতিটি বিভাগে রয়েছে অনেকগুলো জেলা। বাংলাদেশের মোট জেলার সংখ্যা ৬৪টি। জেলার চেয়ে ক্ষুদ্রতর প্রশাসনিক অঞ্চলকে উপজেলা বা থানা বলা হয়। সারা দেশে উপজেলা এবং থানা রয়েছে ৫০৭টি। এই থানা গুলো ৪,৪৮৪টি ইউনিয়ন, ৫৯,৯৯০টি মৌজা, এবং ৮৭,৩১৯টি গ্রামে বিভক্ত । বিভাগ, জেলা, ও থানা পর্যায়ের প্রশাসনে কোন নির্বাচিত কর্মকর্তা নাই; সরকার নিযুক্ত প্রশাসকদের অধীনে এসব অঞ্চল পরিচালিত হয়ে থাকে। ইউনিয়ন, বা পৌরসভার ওয়ার্ড গুলিতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতি রয়েছে। ১৯৯৭ সালের আইন অনুযায়ী ইউনিয়ন পর্যায়ে মহিলাদের জন্য ২৫% আসন সংরক্ষণ করা ইয়য়। [১৬] এছাড়া শহরাঞ্চলে ৬টি সিটি কর্পোরেশন (ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল), এবং ২২৩টি পৌরসভা রয়েছে। এগুলোর সবগুলিতেই জনগণের ভোটে মেয়র ও জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করা হয়।
রাজধানী ঢাকা বাংলাদেশের বৃহত্তম শহর। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য শহরের মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, কক্সবাজার, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, রংপুর, যশোর, টঙ্গী, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ।
[সম্পাদনা] জনসংখ্যার উপাত্ত
এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: বাংলাদেশের জনসংখ্যার পরিসংখ্যান
বাংলাদেশের জনসংখ্যা ২০০৫ সালের উপাত্ত অনুযায়ী ১৪ কোটি ৬০ লাখ। [১৭] এটি বিশ্বের ৮ম বৃহত্তম দেশ। এখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ১০৫৫ জন, যা সারা পৃথিবীতে সর্বোচ্চ (কিছু দ্বীপ ও নগর রাষ্ট্র বাদে)। এখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২.২% [১৭] (২০০৫ সালের হিসাব)। বাংলাদেশে নারী ও পুরুষের অনুপাত ১০০:১০৬। দেশের অধিকাংশ মানুষ শিশু ও তরুণ বয়সী (০–২৫ বছর বয়সীরা মোট জনসংখ্যার ৬০%, ৬৫ বছরের বেশি বয়সীরা মাত্র ৩%)। এখানকার পুরুষ ও মহিলাদের গড় আয়ু ৬৩ বছর। [১৭]
জাতিগতভাবে বাংলাদেশের ৯৮% মানুষ বাঙ্গালী। বাকি ২% মানুষ বিহারী বংশদ্ভুত, অথবা বিভিন্ন উপজাতীর সদস্য। পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় ১৩টি উপজাতি রয়েছে। এদের মধ্যে চাকমা উপজাতি প্রধান। পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরের উপজাতি গুলোর মধ্যে গারো ও সাঁওতাল উল্লেখযোগ্য।
দেশের ৯৯% মানুষের মাতৃভাষা বাংলা, যা বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা। সরকারী কাজকর্মে ইংরেজীও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে ১৯৮৭ সাল হতে কেবল বৈদেশিক যোগাযোগ ছাড়া অন্যান্য সরকারী কর্মকান্ডে বাংলা ভাষাকে প্রাধান্য দেয়ার চেষ্টা শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশের জনগোষ্ঠির প্রধান ধর্মবিশ্বাস ইসলাম (৮৮%)। এর পরেই রয়েছে হিন্দু ধর্ম (১১%)। বাকি ১% মানুষ বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, অথবা অগ্নিপূজক ধর্মে বিশ্বাসী।'মোট জনগোষ্ঠীর ২১.৪% শহরে বাস করে, বাকি ৭৮.৬% গ্রামাঞ্চলের অধিবাসী।
সরকারী ও বেসরকারী উন্নয়ন কর্মকান্ডের ফলে দারিদ্র বিমোচন ও জনসাস্থ্যে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের জনসংখ্যার এক বিশাল অংশ দারিদ্র সীমার নীচে বাস করে। মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেক দৈনিক মাত্র ১ মার্কিন ডলার আয় করে (২০০৫)। [১৮] আর্সেনিক জনিত বিষক্রিয়া বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা। [১৯] এছাড়া বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব রয়েছে
২০০৫ সালের হিসাবে বাংলাদেশে স্বাক্ষরতার হার প্রায় ৪১% [২০] ইউনিসেফের ২০০৪ সালের হিসাবে পুরুষদের মধ্যে স্বাক্ষরতার হার ৫০% এবং নারীদের মধ্যে ৩১%। [২১] তবে সরকারের নেয়া নানা কর্মসূচীর ফলে দেশে শিক্ষার হার বাড়ছে। এর মধ্যে ১৯৯৩ সালে শুরু হওয়া শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচী সবচেয়ে বেশি সাফল্য অর্জন করেছে। [২২] এছাড়া মেয়েদের শিক্ষার জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে বৃত্তি প্রদান কর্মসূচী নারীশিক্ষাকে এগিয়ে নিচ্ছে। [২৩]
[সম্পাদনা] অর্থনীতি
এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: বাংলাদেশের অর্থনীতি
বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রধানত কৃষিনির্ভর। দেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ কৃষিজীবী। দেশের প্রধান কৃষিজ ফসলের মধ্যে রয়েছে ধান, পাট এবং চা। দেশে আউশ, আমন, বোরো এবং ইরি ধান উত্পন্ন হয়ে থাকে। পাট, যা বাংলাদেশের সোনালী আঁশ নামে পরিচিত, এক সময় বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান উত্স ছিলো। [২৪] বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার অধিকাংশ আসে রফতানিকৃত তৈরী পোশাক হতে, এবং অর্জিত মুদ্রার বেশীরভাগ ব্যয় হয় একই খাতের জন্য কাঁচামাল আমদানীতে।[২৫] সস্তা শ্রম ও অন্যান্য সুবিধার কারণে ১৯৮০-র দশক থেকে এই খাতে যথেষ্ট বৈদেশিক ও স্থানীয় বিনিয়োগ হয়েছে। ২০০২ সালের হিসাবে তৈরী পোশাক খাতে মোট রফতানির পরিমাণ ছিল ৫ বিলিয়ন (৫০০ কোটি) মার্কিন ডলার। [২৬] তৈরী পোশাক খাতে প্রায় ৩০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন, যাঁদের ৯০%-ই নারী শ্রমিক। [২৭] বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার আরেকটি বড় অংশ আসে প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাঠানো অর্থ হতে।
বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২০০৪ সালের হিসাব অনুযায়ী ৪৪০ মার্কিন ডলার। [২১] নানা অর্থনৈতিক সূচকে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের অবস্থান পিছনের সারিতে, তবে বিশ্ব ব্যাংকের ২০০৫ সালের দেশভিত্তিক আলোচনায় এদেশের শিক্ষা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও অন্যান্য সামাজিক খাতে উন্নয়নের প্রশংসা করা হয়েছে।[২৮]
১৯৯০ সাল হতে প্রতিবছর বাংলাদেশ গড়ে ৫% প্রবৃদ্ধি অর্জন করে এসেছে। মধ্যবিত্ত ও ভোক্তা শ্রেণীর প্রসারণ ঘটেছে। ২০০৫ সালের ডিসেম্বর মাসে গোল্ডম্যান স্যাক্স-এর বিশ্লেষণে বাংলাদেশকে আগামী ১১ দেশ এর মধ্যে গণ্য করা হয়েছে। [২৯] ২০০৫ সালের ডিসেম্বরের হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংক ৬.৫% জিডিপি প্রবৃদ্ধির ভবিষ্যতবাণী করেছে।.[৩০]
বাংলাদেশের সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে সারা দেশে চালু হওয়া ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচী। গ্রামীন ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইউনুস ক্ষুদ্র ঋণের প্রবক্তা। ১৯৯০ এর দশকের শেষভাগে গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যসংখ্যা ছিল ২৩ লাখ; অন্যান্য সাহায্য সংস্থারও প্রায় ২৫ লাখ সদস্য রয়েছে। [৩১]
দেশের শিল্প ও রফতানির উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ সরকার দেশের বিভিন্ন স্থানে রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা (Export Processing Zone or EPZ) স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন অথরিটি বা বেপজা এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে। দেশের রফতানি ও আমদানি বাণিজ্যর সিংহভাগ চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর , মংলা সমুদ্র বন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের মাধ্যমে সম্পন্ন হয় ।
[সম্পাদনা] সংস্কৃতি
এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: বাংলাদেশের সংস্কৃতি
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ঐতিহ্য হাজার বছরের বেশি পুরনো। ৭ম শতাব্দীতে লেখা বৌদ্ধ দোহার সঙ্কলন চর্যাপদ বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃত। মধ্যযুগে বাংলা ভাষায় কাব্য, লোকগীতি, ও পালাগানের প্রচলন ঘটে। উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে বাংলা কাব্য ও গদ্যসাহিত্যের ব্যাপক বিকাশ ঘটে। নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম প্রমুখ বাংলা ভাষায় সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। বাংলার লোক সাহিত্যও সমৃদ্ধ; মৈমনসিংহ গীতিকায় এর পরিচয় পাওয়া যায়।
বাংলাদেশের সঙ্গীত বাণীপ্রধান; এখানে যন্ত্রসঙ্গীতের ভূমিকা সামান্য। গ্রাম বাংলার লোক সংগীতের মধ্যে বাউল গান, জারি, সারি, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, মুর্শিদী, গম্ভীরা, কবিগান ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। গ্রামাঞ্চলের এই লোকসঙ্গীতের সাথে বাদ্যযন্ত্র হিসাবে মূলত একতারা, দোতারা, ঢোল, বাঁশি ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।
নৃত্যশিল্পের নানা ধরন বাংলাদেশে প্রচলিত। এর মধ্যে রয়েছে উপজাতীয় নৃত্য, লোকজ নৃত্য, শাস্ত্রীয় নৃত্য, ইত্যাদি। দেশের গ্রামাঞ্চলে যাত্রা পালার প্রচলন রয়েছে। ঢাকা-কেন্দ্রিক চলচ্চিত্র শিল্প হতে প্রতি বছর প্রায় ৮০ হতে ১০০টি বাংলা চলচ্চিত্র তৈরী করা হয়।[৩২]
বাংলাদেশে মোট প্রায় ২০০টি দৈনিক সংবাদ পত্র ও ১৮০০রও বেশি সাপ্তাহিক বা মাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। তবে নিয়মিতভাবে পত্রিকা পড়েন এরকম লোকের সংখ্যা কম, মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৫%। [৩৩] গণমাধ্যমের মধ্যে রেডিও অঙ্গনে বাংলাদেশ বেতার ও বিবিসি বাংলা জনপ্রিয়। সরকারী টেলিভিশন সংস্থা বাংলাদেশ টেলিভিশন ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে ৫টির বেশি উপগ্রহভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল সম্প্রচারিত হয়।
বাংলাদেশের রান্না-বান্নার ঐতিহ্যের সাথে ভারতীয় ও মধ্যপ্রাচ্যের রান্নার প্রভাব রয়েছে। ভাত, ডাল ও মাছ বাংলাদেশীদের প্রধান খাবার, যেজন্য বলা হয়ে থাকে মাছে ভাতে বাঙালি। দেশে ছানা ও অন্যান্য প্রকারের মিষ্টান্ন , যেমন রসগোল্লা, চমচম বেশ জনপ্রিয়।
বাংলাদেশের নারীদের প্রধান পোষাক শাড়ি। অল্পবয়স্ক মেয়েদের মধ্যে, বিশেষত শহরাঞ্চলে সালোয়ার কামিজেরও চল রয়েছে। পুরুষদের প্রধান পোষাক লুঙ্গি, তবে শহরাঞ্চলে পাশ্চাত্যের পোষাক শার্ট-প্যান্ট প্রচলিত। বিশেষ অনুষ্ঠানে পুরুষরা পাঞ্জাবী-পায়জামা পরিধান করে থাকেন।
এখানকার প্রধান সামাজিক অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে মুসলমান সম্প্রদায়ের উত্সব ঈদুল ফিত্র ও ঈদুল আজহা, এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের দূর্গা পূজা। বৌদ্ধদের প্রধান উত্সব বৌদ্ধ পূর্ণিমা, আর খ্রীস্টানদের বড়দিন। সার্বজনীন উত্সবের মধ্যে পহেলা বৈশাখ প্রধান। গ্রামাঞ্চলে নবান্ন, পৌষ পার্বণ ইত্যাদি লোকজ উত্সবের প্রচলন রয়েছে। এছাড়া স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস এবং ভাষা আন্দোলনের স্মরণে ২১শে ফেব্রুয়ারি তারিখে শহীদ দিবস পালিত হয়।
ক্রিকেট ও ফুটবল বাংলাদেশের জনপ্রিয়তম খেলা। ২০০০ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল টেস্ট ক্রিকেট খেলার মর্যাদা লাভ করে। কাবাডি বাংলাদেশের জাতীয় খেলা। অন্যান্য খেলার মধ্যে হকি, হ্যান্ডবল, সাঁতার এবং দাবা উল্লেখযোগ্য। এ যাবৎ ৩ জন বাংলাদেশী - নিয়াজ মোর্শেদ, জিয়াউর রহমান, এবং রিফাত বিন সাত্তার - দাবার আন্তর্জাতিক গ্র্যান্ড মাস্টার খেতাব লাভ করেছেন।[৩৪]
[সম্পাদনা] তথ্যসূত্র
সংজ্ঞা, উইকি-অভিধান হতে
পাঠ্যবই, উইকিবই হতে
উক্তি, উইকিউক্তি হতে
রচনা সংকলন, উইকিউৎস হতে
ছবি ও অন্যান্য মিডিয়া, কমন্স হতে
সংবাদ, উইকিসংবাদ হতে
- ↑ ১.০ ১.১ ১.২ ১.৩ ১.৪ ১.৫ Baxter, C (1997). Bangladesh, From a Nation to a State. Westview Press. ISBN 0-813-33632-5.
- ↑ ২.০ ২.১ সেন, অমর্ত্য (১৯৭৩). Poverty and Famines. অক্সফোর্ড ইউনিভারসিটি প্রেস. ISBN 0-198-28463-2.
- ↑ Collins, L; D Lapierre (1986). Freedom at Midnight, Ed. 18. Vikas Publishers, New Delhi. ISBN 0-706-92770-2.
- ↑ Salik, Siddiq (1978). Witness to Surrender. Oxford University Press. ISBN 0-195-77264-4.
- ↑ Genocide in Bangladesh, 1971. Gendercide Watch.
- ↑ LaPorte, R (1972). "Pakistan in 1971: The Disintegration of a Nation". Asian Survey 12(2): 97-108.
- ↑ White, M (November 2005). Death Tolls for the Major Wars and Atrocities of the Twentieth Century.
- ↑ The Bangladeshi holocaust. VirtualBangladesh.com.
- ↑ Burke, S (1973). "The Postwar Diplomacy of the Indo-Pakistani War of 1971". Asian Survey 13 (11): 1036-1049.
- ↑ ১০.০ ১০.১ Mascarenhas, A (1986). Bangladesh: A Legacy of Blood. Hodder & Stoughton, London. ISBN 0-340-39420-X.
- ↑ ১১.০ ১১.১ "Constitutional Amendments". Banglapedia. Asiatic Society of Bangladesh. Retrieved on 2006-07-14.
- ↑ Ali, A (1996). "Vulnerability of Bangladesh to climate change and sea level rise through tropical cyclones and storm surges". Water, Air, & Soil Pollution 92 (1-2): 171-179.
- ↑ Summit Elevations: Frequent Internet Errors. Retrieved 2006-04-13.
- ↑ IUCN (1997). "Sundarban wildlife sanctuaries Bangladesh". World Heritage Nomination-IUCN Technical Evaluation.
- ↑ CIA World Fact Book, 2005.
- ↑ Local Government Act, No. 20, 1997.
- ↑ ১৭.০ ১৭.১ ১৭.২ World Health Report 2005. World Health Organization.
- ↑ Congressional Budget Justification - FY 2005. USAID.
- ↑ Nickson, R, J McArthur, W Burgess, KM Ahmed, P Ravenscroft, M Rahman (1998). "Arsenic poisoning of Bangladesh groundwater". Nature (6700): 338.
- ↑ 2005 Human Development Report. UNDP.
- ↑ ২১.০ ২১.১ UNICEF: Bangladesh Statistics.
- ↑ Ahmed, A; C del Nino (2002). The food for education program in Bangladesh: An evaluation of its impact on educational attainment and food security, FCND DP No. 138. International Food Policy Research Institute.
- ↑ Khandker, S; M Pitt, N Fuwa (2003). Subsidy to Promote Girls’ Secondary Education: the Female Stipend Program in Bangladesh. World Bank, Washington, DC.
- ↑ "Jute". Banglapedia. Asiatic Society of Bangladesh. Retrieved on 2006-07-14.
- ↑ Roland, B, "Bangladesh Garments Aim to Compete", BBC, 2005.
- ↑ Rahman, S (2004). "Global Shift: Bangladesh Garment Industry in Perspective". Asian Affairs 26 (1).
- ↑ Begum, N (2001). “Enforcement of Safety Regulations in Garment sector in Bangladesh”, Proc. Growth of Garment Industry in Bangladesh: Economic and Social dimension, 208-226.
- ↑ Bangladesh - Country Brief, World Bank, July 2005
- ↑ "South Korea, Another `BRIC' in Global Wall", 2005-12-09.
- ↑ Annual Report 2004-2005, Bangladesh Bank
- ↑ Schreiner, Mark (2003). "A Cost-Effectiveness Analysis of the Grameen Bank of Bangladesh,". Development Policy Review 21 (3): 357-382.
- ↑ Feature film in Banglapedia
- ↑ Newspapers and periodicals in Banglapedia
- ↑ Rifat gets GrandMaster title, দি নিউ নেশন, জুলাই ৮, ২০০৬।
[সম্পাদনা] আরও দেখুন
ইতিহাস • প্রশাসনিক অঞ্চল • ভূগোল • অর্থনীতি • রাজনীতি • জনসংখ্যার পরিসংখ্যান • সংস্কৃতি • পরিবহন ব্যবস্থা • পর্যটন • সামরিক বাহিনী • ভাষা • ধর্মবিশ্বাস • সংবাদপত্র • বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ • জাতীয় পতাকা • জাতীয় সঙ্গীত • শহর