বারাণসী
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বারাণসী ভারতের একটি ঐতিহাসিক শহর।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা] অবস্থান
উত্তর ভারতের উত্তর প্রদেশের বারাণসী শহর পবিত্র নদী গঙ্গার তীরে অবস্থিত। ভৌগলিক অবন্থান ২৫.৩৬° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৩.১৩° পূর্ব দ্রাঘিমাংশ । ভৌগলিক আয়তন ও সমুদ্র সমতল হতে উচ্চতা যথাক্রমে ১৫৫০ বর্গ কলোমিটার ও ৮০.৭১ মিটার। জনসংখ্যা (২০০১) ১,২১১,৭৪৯ ।
[সম্পাদনা] আবহাওয়া
ভুগোলার্ধের কর্কট ক্রান্তি রেখা বারাণসীর উপর দিয়ে চলে গেছে বলে গরমকালে তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে, সাথে থাকে জলীয় বাষ্পের তীব্র প্রভাব। মৌসুমী জলবায়ুর প্রভাবে মৌসুমী বৃষ্টিপাত হয় প্রধানত জুন জুলাই মাসে। অন্যদিকে শীতকালে আবহাওয়া অনেক আরামপ্রদ হয়। এসময় তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে। পর্যটকদের জন্য বারাণসীতে আসবার উপযুক্ত সময় হলো অক্টোবর হতে এপ্রিল পর্যন্ত।
[সম্পাদনা] নামকরণ
বারাণসী শহরটি বেনারস ও কাশী নামেও পরিচিত। ভারতীয় সরকারের এক আদেশ বলে মে ২৪, ১৯৫৬ তারিখ হতে বেনারস এর নতুন নাম হয় বারাণসী। বারাণসী হচ্ছে ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী।
[সম্পাদনা] ইতিহাস
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শতাব্দী প্রাচীন পূণ্যভূমি হচ্ছে এই বারাণসী বা কাশি। তাদের মতে এস্থান হচ্ছে সৃষ্টি ও ধ্বংসের পূণ্যভূমি। মনে করা হয় যে এই শহর সবচে প্রাচীন জীবন্ত শহর। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা মনে করে যদি কোন হিন্দু বারাণসী মৃত্যুবরণ করে তবে সে জন্ম জন্মান্তরের পুর্ণজন্মের চক্র হতে মুক্তি পায়। হিন্দু দেবতা ও দেবী শিব পার্বতীর আবাসভূমি হচ্ছে এই বারাণসী সৃষ্টি রহস্য এখনো অনাবিষ্কৃত। মনে করা হয় যে বারাণসী গঙ্গা স্নান করলে জীবনের সমস্ত পাপ ধুয়ে মুছে যায়।
বারাণসী প্রায় ৩০০০ বছরের সভ্যতা ও শিক্ষার কেন্দ্র ছিল। বারাণসী হতে ১০ কিলোমিটার দূরে সরনাথে গৌতম বুদ্ধ তাঁর বুদ্দত্ব প্রাপ্তির পর প্রথম ধর্মের বাণী প্রচার শুরু করেছিলেন। আজ অবধি বারাণসী হিন্দু ধর্মের পৃণর্জাগরণ, জ্ঞান বিজ্ঞান, দর্শন, সংস্কৃতি, ভারতীয় চিত্রকলা ও শিল্পকর্মের কেন্দ্র হয়ে আছে। বারাণসী জৈন ধর্মাবলম্বীদেরও পূণ্যভূমি হিসেবে বিবেচিত। মনে করা হয় যে, আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্রের পূর্বসূরী আয়ুর্বেদের সৃষ্টি হয়েছিল এই শহরে। আয়ুর্বেদ ও যোগ শাস্ত্রের প্রণেতা মহর্ষি পগঞ্জলি এই শহরে সম্পৃক্ত ছিলেন।
প্রাচীন কাল হতেই বারাণসী বাণিজ্যের একটি কেন্দ্র ছিল। এখানকার সোনা, রূপার অলংকার ও সিল্কের সুনাম ছিল।
বিখ্যাত সাহিত্যিক মার্ক টোয়েন বারাণসী দেখে মন্তব্য করেছিলেন, “ইতিহাস, ঐতিহ্য ও কিংবদন্তীর চেয়ে প্রাচীন; এবং এর সবগুলোর প্রাচীনত্ব যোগ করলে যত প্রাচীন হয়, দেখে তারচে’ বেশী প্রাচীন মনে হয়। “
[সম্পাদনা] বারাণসীর বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠান
বারাণসীতে সারা বছর ধরে চলে বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠান। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- রামলীলা- প্রতি বছর অক্টোবর-নভেম্বরে মাস ব্যাপী এই উৎসব চলে। সংস্কৃত কবি তুলসি দাসের রামচরিতনামা অবলম্বনে প্রাচীন হিন্দু আচার অনুষ্ঠানাদি পরিবেশিত হয় এই উৎসবে।
- বুদ্ধ পূর্ণিমা-মার্চ মাসে ভগবান বুদ্ধের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই দিনে সরনাথে বিশাল মেলা হয় এবং বুদ্ধ মুর্তি নিয়ে মিছিল বের হয়।
- ভারত মিলাপ-দশেরার দিন রাম তাঁর ভাই ভারতের সাথে মিলিত হন নতিল্মলিতে। এ মহা মিলনকে চিরজীবী করে রেখেছে ভারানাসির এই মেলা। কাশির মহারাজা তাঁর সমস্ত রাজসিক ঔজ্জ্বল্য নিয়ে এ উৎসবে অংশ নেন।
- হনুমত জয়ন্তি-হনুমানজীর জন্মজয়ন্তীকে কেন্দ্র করে হনুমান চরিত্র, রাম, কৃষ্ণলীলা ও স্বরস্বতী চরিত্রের উপর ভিত্তি করে নাট্যকলা পরিবেশিত হয় এই উৎসবে। সংকট মোচন মন্দিরে এই উৎসব চলে ৫ দিন ধরে।
- ধ্রুপদ মেলা-শহরের অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে এই ধ্রুপদ মেলা। ভারতের বিখ্যাত ধ্রুপদীয়াগণ তুলসিঘাটে মার্চ মাসে ৫ দিন ধরে এই অনুষ্ঠানে ধ্রুপদ পরিবেশন করেন।
- মহাশিবরাত্রি-যদিও সারা ভারত জুড়েই হিন্দু ধম্বালম্বীদের এই উৎসব অনুষ্ঠান হয়, তবুও ভারানাসিতে এর বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে। বিশেষ করে দারানগরের মহা-মৃত্যুঞ্জয় মন্দির হতে কাশির বিশ্বনাথ মন্দির অবধি ভগবান শিবের বিয়ের মিছিল।
- পাঁচ ক্রোশী পরিক্রমা-নাম থেকেই বোঝা যায় যে পাঁচ জায়গায় এটা অনুষ্ঠিত হয়। এগুলো হচ্ছে কর্দমেশ্বর, ভীমচাঁন্দী, রামেশ্বর, শিবপুর ও কপিলধারা।