বিধান চন্দ্র রায়
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিধান চন্দ্র রায় (জুলাই ১, ১৮৮২ - জুলাই ১, ১৯৬২) পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী, বিশ্ববিখ্যাত চিকিৎসক, স্বাধীনতা সংগ্রামী। সময়টা ১৯৪৮ সাল। সদ্যখন্ডিত পূর্বপাকিস্তান থেকে ছিন্নমূল লক্ষ লক্ষ নরনারী শিশু নিঃসম্বল অবস্থায় শুধু প্রাণটুকু বাঁচাবার তাগিদে পশ্চিমবঙ্গে আছড়ে পড়ছে সাতপুরুষের পদধূলিরঞ্জিত বাস্তুভূমি ছেড়ে। এই অক্লিষ্টকর্মা কর্মবীর তাদের দিয়েছিলেন মাথাগোঁজার ঠাঁই, একমুঠো খাবারের প্রতিশ্রুতি।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা] জন্ম
১৮৮২ খ্রীষ্টাব্দের ১ লা জুলাই পাটনার বাঁকিপুর এলাকায় (বর্তমান ভারতের বিহার রাজ্যের অন্তর্গত) বিধানচন্দ্রের জন্ম হয়। তাঁর বাবা ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট(শুল্ক পরিদর্শক) প্রকাশচন্দ্র আর মা ছিলেন ধর্মপ্রাণা অঘোরকামিনী দেবী।
[সম্পাদনা] শিক্ষা
১৯০১ সালে পাটনা কলেজ থেকে গণিতে অনার্স সহ বি.এ. পাশ করে তিনি কলকাতায় চলে আসেন। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে ১৯০৬ সালে এল এম এস এবং দু বছর পর মাত্র ছাব্বিশ বছর বয়সে এম ডি ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর বিলাত গিয়ে কেবল দু বছর সময়কালে একসাথে এম আর সি পি (লন্ডন)এবং এফ আর সি এস (ইংল্যান্ড) পরীক্ষায় সসম্মান উত্তীর্ণ হয়ে সেখানকার ছাত্রশিক্ষক মহলে আলোড়ন তোলেন।
[সম্পাদনা] কর্মজীবন
সেবাপরায়ণা মায়ের ছবিটি সামনে রেখে চিকিৎসাক্ষেত্রে তিনি সেই সহানুভূতিকেই সম্বল করলেন। রোগ নির্ণয়ে ও ওষুধ নির্বাচনে তিনি ছিলেন সাক্ষাৎ ধন্বন্তরি। এই পেশাকে তিনি কোনোদিনই ব্যবসায়ীর লোভাতুর দৃষ্টিতে দেখেননি। পরবর্তীকালে মুখ্যমন্ত্রীর গুরুদায়িত্বপূর্ণ নানা কাজের মাঝেও জাতি ধর্ম দল মত নির্বিশেষে দীনদরিদ্রের সেবায় নিয়মিতভাবে তিনি দৈনিক একটি ঘন্টা ব্যয় করতেন।
[সম্পাদনা] রাজনৈতিক জীবন
১৯২৩ সালে সর্বত্যাগী দেশবন্ধুর কাছে রাজনৈতিক দীক্ষা লাভ। কিছুদিনের মধ্যে আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হন। মহাত্মা গান্ধীর ডাকে কংগ্রেসে যোগদান।১৯৩১ সালে কারাবরণ করেন । দেশ স্বাধীন হবার পর উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল হবার জন্য তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর লোভনীয় প্রস্তাব সবিনয় ফিরিয়ে দেন। পশ্চিমবঙ্গের আইন সভার সদস্যগণ একবাক্যে তাঁকে দলনেতা নির্বাচন করলে সমস্যাকন্টকিত ভূমিখন্ডকে নবরূপ রূপায়ণকল্পে দায়িত্বপূর্ণ মুখ্যমন্ত্রীর পদ অলংকৃত করেন(পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী)। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দলের প্রতিনিধিত্বে ১৯৪৮ সালের ১৪ই জানুয়ারি থেকে মৃত্যুকাল অবধি ১৪ বছর তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।
[সম্পাদনা] পশ্চিমবঙ্গের নবরূপকার
উদ্বাস্তুর আগমনে রাজ্যে তখন খাদ্য ও বাসস্থানের সমস্যা ভয়াবহ আকার নিয়েছে। তাছাড়া পূর্ব পাকিস্তান থেকে কাঁচামাল পাটের যোগান বন্ধ । তিনি বহু পতিত জমি উদ্ধার করে এবং কিছু ধানের জমিতে পাটচাষের ব্যবস্থা করে লক্ষাধিক চটকলকর্মীর সম্ভাব্য বেকারি রুখলেন। শিল্পসমৃদ্ধ বাংলা গড়তে তাঁর ত্রুটিহীন পরকল্পনায় স্থাপিত হল দুর্গাপুর ইস্পাতনগরী , চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানা । বাসস্থানের জন্য তৈরী হল কল্যাণী উপনগরী, লেক টাউন, লবণহ্রদ নগর । দুদ্ধ সরবরাহের জন্য গড়ে তুললেন হরিণঘাটা দুগ্ধপ্রকল্প। শিক্ষিত বেকারদের বিপুল পরিমাণে কর্মনিয়োগের জন্য সৃষ্টি করলেন কলকাতা রাষ্ট্রীয় সংস্থা।
[সম্পাদনা] শিক্ষাব্রতী
তিনি ১৯৪৩-৪৪ খ্রীঃ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ ছিলেন। তাঁর ঐকান্তিক ইচ্ছায় গড়ে উঠল রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়, বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ, পুরুলিয়া , রহড়া, নরেন্দ্রপুরে প্রাচীন ভারতীয় আদর্শে আশ্রমিক পরিবেশে রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যালয় ।
[সম্পাদনা] সংস্কৃতিমনস্কতা
সত্যজিত রায়ের পথের পাঁচালীর মত আন্তর্জাতিক খ্যাতিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রের ব্যয়ভার তাঁর সরকার বহন করে। বিশ্ববরেণ্য নৃত্যশিল্পী উদয়শংকরকে তিনি সরকারী তহবিল থেকে অনুদান দেন। কবিগুরুর জন্মশতবার্ষিকীতে রবীন্দ্ররচনাবলী প্রকাশের উদ্যোগ নেন।
[সম্পাদনা] মৃত্যু
১৯৬২ সালের ১ লা জুলাই। জন্মদিনের অভিনন্দনের অজস্র মালা শেষ বিদায়ের অশ্রুস্নাত অর্ঘ্যে রূপান্তরিত হল। অসমাপ্ত ফেলে গেলেন কলকাতা পাতাল রেল ,কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মত প্রকল্প। তাঁর জন্ম (ও মৃত্যু) দিন জুলাই ১ ভারতে চিকিৎসক দিবস হিসাবে পালন করা হয়।