তাহমিমা আনাম
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
তাহমিমা আনাম (জ. ১৯৭৫)[১] যুক্তরাজ্য প্রবাসী একজন বাংলাদেশী লেখিকা এবং ঔপন্যাসিক। তিনি প্রথম বাংলাদেশী যিনি ইংরেজি ভাষায় উপন্যাস রচনায় তার সিদ্ধির প্রমাণ রেখেছেন। তার প্রথম উপন্যাস আ গোল্ডেন এজ (A Golden Age) ২০০৭ সালে ইংল্যান্ড থেকে প্রকাশিত হয়। বিখ্যাত প্রকাশক জন মারে এটি প্রকাশ করেছেন।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা] জন্ম ও বাল্যকাল
১৯৭৫ সালে তাহমিমা জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মাহফুজ আনাম দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার সম্পাদক এবং মা শাহীন আনাম বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থা মানুষের জন্য-এর প্রধান।[২] বাবা-মা দুজনই একসমূ জাতিসংঘে চাকুরি করতেন। সেই সুবাদে তাহমিমার শৈশব ও কৈশোরের অধিকাংশ সময়ই বাংলাদেশের বাইরে বাইরে কেটেছে। পড়াশোনাও করেছেন ইংরেজি মাধ্যমে। তবে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করলেও বাংলা সংস্কৃতির চর্চা করেছেন। তার বাবা-মা ছোটবেলা থেকেই বাসয় তার সাথে বাংলাতে কথা বলতেন আর সময় সময় দেশে নিয়ে আসতেন। চাকুরি ইস্তফা দিয়ে একসময় তার বাবা-মা চিরস্থায়ীভাবে দেশে ফিরে এলেও পড়াশোনার জন্য তাহমিমার আর ফেরা হয়ে উঠেনি। তবে মাঝেমধ্যেই তিনি বাংলাদেশে এসেছেন।
[সম্পাদনা] শিক্ষাজীবন
তাহমিমা আনাম যুক্তরাষ্ট্রের সনামধন্য হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ নৃতত্ত্ব বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। পিএইচডি শেষ করার পর তিনি কাব্যজগতের অনন্য প্রতিভা অ্যান্ড্রু মোশনের অধীনে লন্ডনের রয়েল হলওয়ে কলেজে সৃজনশীল লেখালেখির কোর্সে ভর্তি হন। তার আগের পড়াশোনার চেয়ে এই কোর্সটি ছিলো সম্পূর্ণই ভিন্ন। তবে তাহমিমা বলেন সমাজবিজ্ঞান এবং সাহিত্য পরষ্পর সম্পর্কযুক্ত। এ সম্বন্ধে বলেছেন, "সামাজিক সম্পর্ক ও আদান প্রদান, পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করেন সমাজবিজ্ঞানী। ভালো লেখক হওয়ার মূল চাবিও কিন্তু পর্যবেক্ষণ। তাই আমার মনে হয়না যে আমি উল্টো পথে হেঁটেছি। তাছাড়া বরাবরই তো আমি লেখক হতে চেয়েছি। আমার শুধু মনে হয়েছে লেখালেখি শুরুর আগে একটি প্রফেশনাল ডিগ্রী নেয়া বড় জরুরি। পিএইচডি করার পুরো সময়টিও কিন্তু আমি উপন্যাসটি নিয়ে ভেবেছি; সেটি লেখার প্রস্তুতি নিয়েছি।"
লেখালেখির স্কুলে ভর্তি হওয়াটা তিনি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছিলেন। ইয়ান ম্যাকওয়ান, কাজুও ইশিগুরো প্রমুখ খ্যাতিমান লেখকও এধরণের কোর্স করেছিলেন। এই কোর্সটি তাহমিমার উপন্যাস লেখার কাজে দারুণ সহযোগিতা করে। বলা যায় এখানে শিক্ষাজীবন শেষে করতে না করতেই তিনি প্রথম উপন্যাস লেখার কাজে হাত দেন। এছাড়া ঐতিহ্যও লেখার জন্য তাকে উৎসাহিত করেছে। তার দাদা আবুল মনসুর আহমেদ[৩] ছিলেন বাংলা ভাষার ঔপন্যাসিক।
[সম্পাদনা] কর্মজীবন ও সাহিত্যকর্ম
তার প্রথম উপন্যাস আ গোল্ডেন এজ বা স্বর্ণযুগ রচনার কাজ শুরু করেন ২০০৪[৪] সালে। তখন তিনি একইসাথে লেখালেখির কোর্সেও পড়ছেন। বাংলাদেশে না থাকার কারণে বাংলার উপর ভালো দখল তার ছিলোনা। এজন্যই মূলত ইংরেজিতে হাত দিয়েছেন। তবে ইংরেজির মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ফুটিয়ে তোলার সুযোগ তাকে অনুপ্রাণিত করেছে। লেখালেখির পাশাপাশি কোর্স চালিয়ে যাবার কারণে একসময় একটি সংকলনে তার লেখার একটি অংশ ছাপা হয়। সংকলনটির নাম ছিলো বেডফোর্ড স্কয়ার।[৫] এটি ছিলো কোর্সটিতে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের রচনার সংকলন। অ্যান্ড্রু মোশন কর্তৃক সংকলিত এই সংকলনটির প্রকাশক ছিলেন জন মারে। তার লেখা অংশটুকু পড়ে ভালো লেগে যায় ম্যারের। তাই তিনি তাহমিমার বইটি প্রকাশের কথা বলে একটি চুক্তি করেন। এই চুক্তি অনুসারে ম্যারের কোম্পানি তাহমিমার দুইটি বই প্রকাশ করবে। তার দ্বিতীয় বইয়ের বিষয়বস্তু ১৯২০-এর কলকাতা।[৬]
[সম্পাদনা] আ গোল্ডেন এজ
এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: আ গোল্ডেন এজ
আ গোল্ডেন এজের বিষয়বস্তু হল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ। তার জন্মের ৪ বছর আগেই মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়ে গিয়েছিলো। তবুও তিনি তার পূর্বপুরুষদের প্রেরণাকে পুঁজি করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে তার উপন্যাসে তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছেন। মূলত বাংলার মানুষের দৃষ্টিতে তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফুটিয়ে তুলেছেন। এজন্য তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এছাড়া তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ পরিচালিত মাটির ময়না চলচ্চিত্রের নির্মাণ সেটেও তিনি কাজ করেছেন।[৭] এসময় মুক্তিযুদ্ধ সম্বন্ধে তিনি নিগূঢ় জ্ঞান লাভ করেন। উপন্যাসটির কেন্দ্রী চরিত্র রেহানা[৮]। রেহানার মধ্যে তাহমিমা তার দাদীমার ছায়া ফেলেছেন।
[সম্পাদনা] পুরষ্কার ও সম্মাননা
- বাংলাদেশ ডিসার্টেশন অ্যান্ড প্রেডিসার্টেশন অ্যাওয়ার্ড, ২০০০ - ০১। (Bangladesh Dissertation and Predissertation Award)
[সম্পাদনা] তথ্যসূত্র
- ↑ অন্য আলো, দৈনিক প্রথম আলো, ২২ ডিসেম্বর, ২০০৬, শুক্রবার
- ↑ অন্য আলো, দৈনিক প্রথম আলো, ২২ ডিসেম্বর, ২০০৬, শুক্রবার
- ↑ অন্য আলো, দৈনিক প্রথম আলো, ২২ ডিসেম্বর, ২০০৬, শুক্রবার
- ↑ অন্য আলো, দৈনিক প্রথম আলো, ২২ ডিসেম্বর, ২০০৬, শুক্রবার
- ↑ অন্য আলো, দৈনিক প্রথম আলো, ২২ ডিসেম্বর, ২০০৬, শুক্রবার
- ↑ অন্য আলো, দৈনিক প্রথম আলো, ২২ ডিসেম্বর, ২০০৬, শুক্রবার
- ↑ অন্য আলো, দৈনিক প্রথম আলো, ২২ ডিসেম্বর, ২০০৬, শুক্রবার
- ↑ অন্য আলো, দৈনিক প্রথম আলো, ২২ ডিসেম্বর, ২০০৬, শুক্রবার
[সম্পাদনা] বহিঃসযোগ
- তাহমিমা আনামের নিজস্ব ওয়েবসাইট
- দ্য বুকসেলার সাময়িকীতে তাহমিমার নাম: দ্য গোল্ডেন গার্ল
- বিবিসিতে ইয়ান ম্যাকমিলানের নেয়া তাহমিমা আনামের সাক্ষাৎকার
- বিবিসেতে আসিফ সালেহ্র সাথে তাহমিমা আনামের ছবি
- অথরট্রেক-এ তাহমিমার জীবনী
- গ্রান্টা সাময়িকীতে তাহমিমা
- বেস্টসেলারে তাহমিমার বই
- Bangladesh Dissertation and Predissertation Award প্রাপ্ত তাহমিমা
- লিডিয়া বিন, জুডি কার্তেজ এবং তাহমিমা আনাম একসাথে
- অ্যান্ড্রু মোশনের ফরওয়ার্ড লিখনিতে তাহমিমা
- অ্যামাজন ডট কমে তাহমিমার বই: আ গোল্ডেন এজ
- তাহমিমা সম্পর্কে ইয়ান ম্যাকমিলান রাইটিং ল্যাব-এর স্বীকৃতি
- রজার্স, কোলেরিজ অ্যান্ড হোয়াইট লিটারারি এজেন্সির ক্যাটালগে তাহমিমার বই