বাংলাদেশ সেনা বাহিনী
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বাংলাদেশ সেনা বাহিনী বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর একটি সংস্থা।
১,১০,০০০ সদস্য নিয়ে সাত ডিভিশনে বিভক্ত এই বাহিনী, ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যান্য আর্মির মতো বৃটিশ সেনাবাহিনীর আদলে গঠিত। অবশ্য এই বাহিনী বর্তমানে ইউ.এস আর্মির কৈশলগত পরিকল্পনা কার্যপ্রনালী, প্রশিক্ষণ ব্যবষ্থপনা পদ্ধতি এবং ননকমিশন অফিসার প্রশিক্ষন পদ্ধতি গ্রহন করেছে৷ এটি গোলন্দাজ, সাজোয়া ও কমবেট ইউনিট দ্বারা সজ্জিত ৷
অধিকন্তু এই বাহিনী, শান্তি-রক্ষী বাহিনী হিসাবে তার সামর্থ উন্নত করতে উত্সাহী এবং সেই লক্ষে ইউ.এস মিলিটারির সাথে একযোগে কাজ করছে ৷
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা] ইতিহাস
[সম্পাদনা] গঠন/প্রতিষ্ঠা
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলা কালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথমিকভাবে ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট-এর বাঙ্গালি সৈন্য ও অফিসার এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অন্যান্য অংশ হতে যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন তাদের সমন্নয়ে এই বাহিনী গঠিন হয়। এই নতুন বাহিনী কয়েকটি ব্রিগেডে বিভক্ত ছিল। মেজর জিয়াউর রহমান-এর অধিনস্থ জেড ফোর্স গঠিত হয়েছিল ১ম, ৩য় এবং ৮ম ইষ্ট বেংগল রেজিমেন্ট নিয়ে। মেজর শফিউল্লাহ-র অধিনস্থ এস ফোর্স গঠিত হয়েছিল ২য় এবং ১১শ ইষ্ট বেংগল রেজিমেন্ট নিয়ে ১৯৭১ সালের অক্টবর মাসে। আর কে ফোর্স -এর অধিনায়ক ছিলেন খালেদ মোশাররফ এবং এটি গঠিত হয়েছিল ৪থ, ৯ম এবং ১০ম ইষ্ট বেংগল রেজিমেন্ট নিয়ে।
[সম্পাদনা] সংগঠন
[সম্পাদনা] সংগঠন কাঠামো
এই বাহিনী নিম্নক্ত সজ্জায় বিভক্ত:
আর্মস্:-
- আরমার্ড কোর
- আর্টিলারি রেজিমেন্ট
- কোর অফ ইঞ্জিনিয়ারস্
- কোর অফ সিগনালস্
- ইষ্ট বেংগল রেজিমেন্ট (ইবি)
- বাংলাদেশ ইনফেন্ট্রি রেজিমেন্ট (বিআইআর)
- আর্মি এভিয়েশন
সারভিসেস্:-
- আর্মি সারভিসেস্ কোর
- আর্মি মেডিকেল কোর
- আর্মি অরডিনেন্স কোর
- কোর অফ ইলেক্ট্রিকাল এন্ড মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারস্
- রিমাউন্টস্ ভ্যাটেনারী এন্ড ফার্ম কোর
- আর্মি ডেন্টাল কোর
- কোর অফ মিলিটারী পুলিশ
- আর্মি এডুকেশন কোর
- আর্মি কোর অফ ক্লার্ক
- আর্মড ফোর্সেস্ নার্সিং সারভিসেস্
[সম্পাদনা] কমান্ড এ্যান্ড কন্ট্রোল
চীফ অফ আর্মি স্টাফ | |
---|---|
লেফটেনেন্ট জেনারেল মইন ইউ আহমেদ, পিএসসি | |
প্রিন্সিপ্যাল স্টাফ অফিসারগণ | |
চীফ অফ জেনারেল স্টাফ | মেজর জেনারেল ইকবাল করিম ভূইয়া, পিএসসি |
এডজুটেন্ট জেনারেল | মেজর জেনারেল মো. মতিউর রহমান, এনডিইউ, পিএসসি |
কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল | মেজর জেনারেল আবু রশিদ রকুনদ্দৌলা, পিএসসি |
মাস্টার জেনারেল অফ অরডিনেন্স | মেজর জেনারেল অনুপ কুমার চাকমা, এনডিসি, পিএসসি |
ইঞ্জিনিয়ার ইন চীফ | মেজর জেনারেল মো, ইসমাইল ফারুক চৌধুরী |
মিলিটারী সেক্রেটারী | মেজর জেনারেল শফিকুল ইসলাম, এনডিসি, পিএসসি |
[সম্পাদনা] আর্মি হেডকোয়ার্টারের গঠন:
আর্মি হেডকোয়ার্টার | |
---|---|
ব্র্যাঞ্চ | ডাইরেকটোরেট |
জেনারেল স্টাফ ব্র্যাঞ্চ | স্টাফ ডিউটিস ডাইরেকটোরেট |
মিলিটারী অপারেশনস ডাইরেকটোরেট | |
মিলিটারী ইনটেলিজেন্স ডাইরেকটোরেট | |
মিলিটারী ট্রেনিং ডাইরেকটোরেট | |
উইপোন ইকুইপমেন্ট এ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিক ডাইরেকটোরেট | |
বাজেট ডাইরেকটোরেট | |
ইনফর্মেশন টেকনোলজি ডাইরেকটোরেট | |
আরমার্ড ডাইরেকটোরেট | |
আর্টিলারি ডাইরেকটোরেট | |
সিগনাল ডাইরেকটোরেট | |
ইনফেন্ট্রি ডাইরেকটোরেট | |
এডুকেশন ডাইরেকটোরেট | |
এ্যাডজুটেন্ট জেনারেল ব্র্যাঞ্চ | পারসোন্যাল এডমিনিসট্রেশন ডাইরেকটোরেট |
পারসোন্যাল সারভিসেস্ ডাইরেকটোরেট | |
ওয়েলফেয়ার এ্যান্ড রিহেবিলিটেশন ডাইরেকটোরেট | |
পে পেনশণ এ্যান্ড এ্যাকাউন্টস ডাইরেকটোরেট | |
মেডিকেল ডাইরেকটোরেট | |
কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল ব্র্যাঞ্চ | মুভমেন্ট এ্যান্ড কোয়ার্টারিং ডাইরেকটোরেট |
সাপলাই এ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট ডাইরেকটোরেট | |
ডাইরেকটোরেট অফ ওয়ার্কস এ্যান্ড চীফ ইঞ্জিনিয়ার | |
মাস্টার জেনারেল অফ অরডিনেন্স ব্র্যাঞ্চ | অরডিনেন্স ডাইরেকটোরেট |
ইলেক্ট্রিকাল এ্যান্ড মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারস্ ডাইরেকটোরেট | |
ইন্সপেকশন এ্যান্ড টেকনিক্যাল ডেভেলপমেন্ট ডাইরেকটোরেট | |
ইঞ্জিনিয়ার ইন চীফ ব্র্যাঞ্চ | ইঞ্জিনিয়ার ডাইরেকটোরেট |
ইলেক্ট্রিকাল ওয়ার্কস ডাইরেকটোরেট | |
মিলিটারী সেক্রেটারী'স ব্র্যাঞ্চ | - |
জাজ এডভোকেট জেনারেল ডিপার্টমেন্ট | - |
[সম্পাদনা] পদবিন্যাস
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পদ বিন্যাস ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অনুকরনে বিন্যস্ত। কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদের পদ বিন্যাস (নিম্নগামী):
- ফিল্ড মার্শাল
- জেনারেল
- লেফটেনেন্ট জেনারেল
- মেজর জেনারেল
- ব্রিগেডিয়ার জেনারেল
- কর্ণেল
- লেফটেনেন্ট কর্ণেল
- মেজর
- ক্যাপটেন
- লেফটেনেন্ট
- সেকেন্ড লেফটেনেন্ট
জুনিয়র কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদের পদ বিন্যাস (নিম্নগামী):
- মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার
- সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার
- ওয়ারেন্ট অফিসার
নন-কমিশনপ্রাপ্তদের পদ বিন্যাস (নিম্নগামী):
- কম্পানি কোয়ার্টমাস্টার হাবিলদার /স্টাফ সার্জেন্ট
- সার্জেন্ট
- করপরাল
- ল্যান্স করপরাল
- সৈনিক
[সম্পাদনা] ব্যবহৃত অস্ত্র সামগ্রী
[সম্পাদনা] হুইল্ড আর্মার্ড পারসোন্যাল ক্যারিয়ার (এপিসি)
- বিটিআর-৮০ - এটি রাশিয়ার তৈরী বাংলাদেশের প্রধানতম আর্মাড পারসোন্যাল ক্যারিয়ার (এপিসি)।
- ফাহ্দ ২৪০ - মিশরের তৈরী, ইরাক-কুয়েত সীমান্তে UNIKOM PSO মিশনে ব্যাবহৃত হচ্ছে।
[সম্পাদনা] ট্র্যাক্ট আর্মার্ড ফাইটিং ভ্যাইকেলস্
- বিটিআর-টি - এটি বাংলাদেশী ইঞ্জিনিয়ারদের দ্বারা টি-৫৪/৫৫ এমবিটি হতে রূপান্তরিত আর্মড ফাইটিং ভ্যাইকেলস্ (এএফভি)। আর্মি প্রায় শ’খানেক এমবিটি-কে আধুনিক সুরক্ষিত হেভি এপিসি-তে রূপান্তরিত করেছে। এপিসির প্রযোজনীয় যন্ত্রংশ রাশিয়া হতে সংগ্রহীত এবং স্থানীয় ভাবে সংযোজিত।
- এম ১১৩ - এটি যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তনের তৈরী। বাংলাদেশ শুধুমাত্র শান্তি রক্ষা মিশনে ব্যবহারের জন্য লিজ নিয়েছে।
- এমটি-এলবি - এটি রাশিয়ার তৈরী হালকা অস্ত্রে সজ্জিত এপিসি। বাংলাদেশ আর্মির কাছে ২০টি এমটি-এলবি আছে।
- ওয়াইডাব্লিউ-৫৩১ (টাইপ ৮৫) - চীনের তৈরী এই এপিসিতে একটি ১২.৭ মিমি ভারী মেশিনগান ও ১০ জনের বসার জায়গা আছে। বাংলাদেশের কাছে এই এপিসি ৫০টি আছে।
[সম্পাদনা] লাইট ব্যাটেল ট্যাংক (এলবিটি)
- টাইপ ৬২ - চীনের তৈরী এই ট্যাংক জলাভূমি, জংগলাকীর্ণ এবং পাহাড়ী এলাকায় চলাচল উপযোগী। বাংলাদেশের কাছে মোট ১৪২টি এই ধরনের ট্যাংক আছে। পরর্বতীতে এতে লেজার রেন্ঞ্জ ফাইন্ডার যুক্ত করা হয়েছে এবং উচ্চ বিস্ফোরক ট্যাংক বিদ্ধ্বংশী (HEAT) গোলার ঘাতসহ করা হয়েছে।
[সম্পাদনা] প্রধান যুদ্ধ সমূহ
[সম্পাদনা] বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ
ভারতীয় উপমহাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছিল আলাদা দুটি রাষ্ট্র ভারত এবং পাকিস্তান সৃষ্টির মাধ্যমে। পাকিস্তান দুইটি অংশে বিভক্ত ছিল, পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তান। এই দুই অংশের সংষ্কৃতিক ব্যাবধান ছিল বিশাল। ১৯৫২ সালে উর্দূকে রাষ্ট্র ভাষা হিসাবে ঘোষণার বিরূদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে একটি র্যালির আয়োজন করা হয়। পাকিস্তানী মিলিটারি এতে যোগদানকারী ছাত্রদের উপর গুলি চালায়। পরবর্তীতে, ১৯৭০ সালে দেশের ভবিষ্যত্ নির্ধারনের লক্ষ্যে দেশের দুই অংশেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পূর্ব পাকিস্তানের একটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, পুর্বাঞ্চলের সংখাগরিষ্ঠ ভোট পেয়ে নির্বাচনে জয় লাভ করে। কিন্তু তাদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয় নাই৷ শেষ পর্যন্ত এই অবস্থা একটি গৃহযুদ্ধের সুচনা করে এবং যার ফলোশ্রূতীতে প্রায় ১০ মিলিয়ন বাংলাদেশী নিহত হন। অবশেষে ৯ মাসের রক্তাক্ত যুদ্ধের পর, পূর্ব পাকিস্তান একটি স্বাধীন রাস্ট্র প্রতিষ্ঠা করে, যা ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশ নামে পরিচিত।
[সম্পাদনা] পার্বত্য চট্টগ্রাম
অনুগ্রহ পূর্বক এই অংশটি সমৃদ্ধ করূন৷
[সম্পাদনা] শান্তিকালীন কর্মকান্ড
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘ-র UNPSO (United Nation Peace Support Operation) এর সাথে সক্রিয় ভাবে জড়িত। ১৯৯১ সালের ১ম উপসাগরীয় যুদ্ধ চলাকালে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ২,১৯৩ জন সদস্য বিশিষ্ঠ একটি দল সৌদি আরব এবং কুয়েত-এর শান্তি রক্ষা কাজের পর্যবেক্ষক হিসেবে প্রেরণ করে। পরবর্তীতে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শান্তি রক্ষা কাজে অংশ গ্রহন করে নামিবিয়া, কম্বোডিয়া, সোমালি, উগান্ডা/রুযান্ডা, মোজাম্বিক, প্রাক্তন ইয়োগোস্লাভিয়া, লাইবেরিয়া, হাইতি, তাজিকিস্তান, পশ্চিম সাহারা, সিয়েরা লিয়ন, কসোভো, জর্জিয়া, পূর্ব তিমুর, কঙ্গো, আইভরি কোষ্ট ও ইথিওপিয়া। ২০০৬ এর এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের প্রায় ৯,৫০০ সৈন্য সারা বিশ্বে জাতিসঙ্ঘ শান্তি-রক্ষী বাহিনীতে কর্মরত আছে, যা অন্য যেকোন দেশ হতে বেশি। এই বাহিনী আবার ১৯৭৫ সালে সংঘটিত অভ্যুত্থানের সাথে জরিত, যার ফলে শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হন এবং দেশে সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।