মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ (ডিসেম্বর ২৫, ১৮৭৬ - সেপ্টেম্বর ১১, ১৯৪৮) পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা ও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রধান মুসলিম নেতা। তিনি মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করেন।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা] জন্ম, শৈশব ও পরিবার
মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৮৭৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর করাচীতে এক সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়ী পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতা জিন্নাহ পুঞ্জা ছিলেন খাতিয়াওয়ারে একজন ইসমাইলি খোজা। জিন্নাহ তার শিক্ষাজীবন শুরু করেন সিন্ধু মাদ্রাসাতে এবং পরে করাচী মিশন স্কুলে পড়েন। ১৬ বছর বয়সে ১৮৯২ সালে তিনি উচ্চশিক্ষার্থে ইংল্যান্ড গমন করেন। ১৮৯৭ সালে তিনি আইন পেশায় যোগ দেন। ১৯১৮ সালের ১৯ এপ্রিল জিন্নাহ রুতানবাঈকে বিয়ে করেন। একবছর পর তাদের মেয়ে দিনা জন্ম নেয়। তার বোন ফাতেমা জিন্নাহ একজন রাজনীতিক ছিলেন।
[সম্পাদনা] রাজনৈতিক জীবন
১৯০৬ সালে জিন্নাহর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। ঐ বছর কংগেস প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত সচিবের আমন্ত্রনে তিনি সর্ব ভারতীয় কংগ্রেসের কলকাতা সেসনে অংশগ্রহন করেন। ১৯১৩ সালে তিনি Imperial Legislative Council এ নির্বাচিত হন। ওয়াক্ফ মঞ্জুরি করন বিল (Waqf Validating Bill) বিষয়ক মামলাটি পরিচালনা করার মাধ্যমে তিনি অন্যান্য মুসলমান নেতাদের সংস্পর্শে আসেন। ১৯১৩ সালের মার্চে তিনি লক্ষ্ণৌতে ভারতীয় মুসলিম লীগে যোগদান করেন। তখন জিন্নাহ ভারতের হিন্দু-মুসলিম সম্প্রিতির ব্যাপারে তার মত দেন। সেখানে মুসলিম লীগ ও কংগেস একটি সংস্কার প্রস্তাব গ্রহন করে; প্রস্তাবটি Lucknow pact নামে পরিচিত। ১৯১৯ সালে রাওলাট এক্ট এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরুপ জিন্নাহ Imperial Legislative Council থেকে তার সদস্য পদ প্রতাহার করে নেন।
নেহেরু রিপোর্ট প্রকাশ হবার আগ পর্যন্ত জিন্নাহ হিন্দু-মুসলিম একতার প্রতি পক্ষে ছিলেন। ১৯২৮ সালে নেহেরু রিপোর্ট প্রকাশিত হবার পর সকল মুসলিম সম্প্রদায় এর বিরোধীতা করেন। ঐ বছর ডিসেম্বর মাসে নেহেরু রিপোর্ট জাতীয় কনভেনশনে উত্থাপিত হয়। জিন্নাহ কিছু সংশোধনী প্রস্তাব করেন, যার কোনোটাই গৃহিত হয় নাই। ফলশ্রুতিতে তিনি কংগ্রেসের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করেন।
ইংল্যান্ড থেকে ফিরে এসে তিনি মুসলিম লীগকে নতুন করে গড়ে তোলেন। ১৯৩৪ সালে মুসলিম লীগ তাকে এর প্রসিডেন্ট নির্বাচন করে। লাহোরে ১৯৪০ সালে মুসলিম লীগের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, এতে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক।
[সম্পাদনা] পাকিস্তান ও জিন্নাহ
১৪ আগস্ট, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীন হবার পর, জিন্নাহ পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেলের পদ গ্রহন করেন।
[সম্পাদনা] বাংলাদেশ ও জিন্নাহ
যদিও মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ পাকিস্তানের স্থপতি ছিলেন কিন্তু মূলত পাকিস্তান বলতে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানকেই অনুভব করতেন। এরই ফলশ্রুতিতে, নিজের প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রটির ভাঙ্গনের বীজ তিনি নিজ হাতেই রোপন করে যান। তিনি মনে করতেন পূর্ব-পাকিস্তানের বাঙ্গালীরা একসময় পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে পশ্চিমবঙ্গের সাথে যোগ দেবে।
[সম্পাদনা] পাকিস্তানের স্বাধীনতা পূর্ব চিন্তাধারা
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পূর্ব ও পশ্চিম বাংলা নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের সাথে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব করেছিলেন। এই ব্যাপারে মুহম্মদ আলী জিন্নাহকে সাংবাদিক উলপার্ট প্রশ্ন করেছিলেন। জিন্নাহর উত্তর ছিল এ রকম, আমি খুশি হব। কলকাতা ছাড়া বাংলা দিয়ে কি হবে; তার থেকে তারা একত্রে থাকুক। আমি নিশ্চিত তারা আমাদের সাথে বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখবে। (I should be delighted. What the use of Bengal without Calcata, they had much better remain united and independent. I am sure that they would be on friendly terms with us)।
[সম্পাদনা] ভাষা আন্দোলন
পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর ১৯৪৮ সালে মুহাম্মক আলী জিন্নাহ ঢাকা আসেন। তখন তিনি রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দি উদ্যান) এক বিশাল জনসভায় ভাষণ দেন। তিনি বলেন, "পাকিস্তানের একটি নিজস্ব ভাষা থাকা দরকার; কারণ পশ্চিমে পাকিস্তানে লোকেরা উর্দু, সিন্ধি, পসতু, পাঞ্জাবী ও পূর্ব পাকিস্তানে লোকেরা বাংলা বলে। এইসব বাদ দিয়ে আমরা একটা ভাষা নেই যেমন উর্দু, তবে একাত্মবোধ নিশ্চিত হবে ও দেশও তাড়াতাড়ি উন্নতির পথে এগিয়ে যাবে।" তার এই যুক্তি পূর্ব পাকিস্তানে তেমন বিশেষ কার্যকরি হয় না। কারণ যখন কার্জন হলে তিনি কনভোকেশন এর বক্তৃতায় বললেন, "উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা"(Urdu and Urdu only should be the state language of Pakistan)। তখনই জোর আওয়াজ উঠে না না উর্দু এবং বাংলা হতে হবে রাষ্ট্র ভাষা। মূলতঃ এর ভিতরই নিহিত ছিল পাকিস্তান ভাঙ্গনের বীজ।
[সম্পাদনা] মৃত্যু
পাকিস্তান সৃষ্টির প্রায় ১১ মাস পর ১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর করাচীতে যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয়ে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ মৃত্যু বরণ করেন।