লুই পাস্তুর
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
লুই পাস্তুর (২৭শে ডিসেম্বর, ১৮২২) একজন ফরাসি অণুজীববিজ্ঞানী। তিনিই প্রথম আবিষ্কার করেন যে অণুজীব অ্যালকোহল জাতীয় পানীয়ের পচনের জন্য দায়ী। লুই পাস্তুর ফ্রান্সের ডোলে জন্ম গ্রহণ করেন ও আরবোয়া (Arbois) শহরে বেড়ে উঠেন। তার পিতা সেখানে ট্যানারিতে চাকুরি করতেন।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা] শিক্ষা
১৮৪৭ সালে পাস্তুর ফ্রান্সের ইকোল থেকে পদার্থবিদ্যা ও রসায়নে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। সেখানে তিনি জৈব যৌগের আলোক সমানুতা (Optical Isomerism)নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি দেখান যে, আলোক যখন জৈব যৌগের দ্রবনের ভেতর দিয়ে যায় তখন এর দিক পরিবর্তন ঘটে। তিনি প্রস্তাব করেন যে, একই জৈব যৌগ যাদের গঠন এক, তারা সমানু (Isomer) হতে পারে যদি তারা একে অপরের আলোক প্রতিবিম্ব হয়।
[সম্পাদনা] কর্মজীবন
তিনি গবেষণা চালিয়ে যান এবং সেই সাথে ডিজন ও স্ট্রাসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৮৫৪ সালে পাস্তুর স্থানীয় এক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগের ডীন হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। তখন থেকেই তিনি স্থানীয় মদের কল (Brewer)গুলোতে গাজন (Fermentation)প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। তিনি দেখান অ্যালকোহ্ল উৎপাদন ইস্টের পরিমানের উপর নির্ভর করে। তিনি আরও প্রমান করেন মদের অম্লতা তাতে ব্যাক্টেরিয়ার ক্রিয়ার জন্য ঘটে।
[সম্পাদনা] গবেষণা
[সম্পাদনা] মদ শিল্প
মদের অম্লতা (Souring) ফ্রান্সের মদ ব্যবসাতে এক বিশাল সমস্যা ছিল। এর ফলে প্রতিবছর অনেক অর্থ গচ্ছা যেত। পাস্তুর মদের স্বাদ ঠিক রেখে ব্যাক্টেরিয়া মুক্ত করার জন্য গবেষণা শুরু করেন। তিনি দেখেন মদকে গরম করলে ব্যাক্টেরিয়া মরে যায় এবং মদের কোন পরিবর্তন হয় না। পাস্তুর একই পদ্ধতি দুধের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করেন এবং ভাল ফল পান। পাস্তুরের এই পদ্ধতি বিশ্ব ব্যাপি এখন ব্যবহৃত হচ্ছে। তার নামানুসারে এই পদ্ধতিকে পাস্তুরায়ন (Pasteurization)বলা হয়।
[সম্পাদনা] জীবনের উৎপত্তি
পাস্তুর এখন মদে ব্যক্টেরিয়ার উৎস নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। তৎকালীন সময়ে অনেকে ধারণা করতেন ব্যাক্টেরিয়া নির্জীব বস্তু থেকে আপনা আপনি সৃষ্টি হয়। এর বিপক্ষেও অনেকে বিজ্ঞানী ছিলেন। গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটলের সময় থেকেই এই বিতর্ক ছিল, কিন্তু কোন বিজ্ঞান সম্মত উত্তর ছিল না। পাস্তুর পরীক্ষার মাধ্যমে দেখান, নির্জীব বস্তু থেকে ব্যাক্টেরিয়া বা কোন রকম জীবনের সূত্রপাত হতে পারে না। তিনি প্রমান করেন, মদে বাতাস ও অন্যান্য মাধ্যম থেকে ব্যাক্টেরিয়া আসে।
[সম্পাদনা] রেশম শিল্প
১৮৬৫ সালে ফ্রান্স সরকার পাস্তুরকে ফ্রান্স রেশম শিল্পের সমস্যা সমাধানে আহ্ববান জানায়। এক মহামারীতে রেশম পোকার উৎপাদন হ্রাস পেয়েছিল। পাস্তুর দেখেন রেশম পোকার এই সমস্যা বংশগত এবং মায়ের থেকে পরবর্তি প্রজন্মে সংক্রামিত হতে পারে। তিনি প্রস্তাব করেন রোগ মুক্ত গুটি বাছাই করার মাধ্যমেই রেশম শিল্পকে বাচানো সম্ভব।
[সম্পাদনা] জীবানু তত্ত্ব
পাস্তুর দেখান কিছু রোগ অণুজীব দ্বারা সংঘটিত হতে পারে, যারা পানি ও বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়। তিনি তার জীবাণু তত্ত্বে দেখান যে অণুজীব বৃহদাকার জীবকে আক্রমন করে রোগ সংঘটিত করতে পারে।
[সম্পাদনা] বিভিন্ন রোগের ভ্যাক্সিন আবিস্কার
[সম্পাদনা] অ্যান্থ্রাক্স
পাস্তুর প্রথম অ্যান্থ্রাক্স এর ভ্যাক্সিন আবিস্কার করেন। তিনি গবেষনার মাধ্যমে বুঝতে পারেন গৃহপালিত পশুতে অ্যান্থ্রাক্স ব্যাসিলি (Bacillus anthrasis)এর আক্রমনেই অ্যান্থ্রাক্স হয়। তিনি রোগ সৃষ্টিতে অক্ষম অ্যান্থ্রাক্স ব্যাসিলি ভেড়ায় ইনজেকসনের মাধ্যমে প্রবেশ করান এবং দেখেন পরবর্তিতে এগুলো আর রোগ সৃষ্টিতে সক্ষম ব্যাসিলি দিয়ে আক্রান্ত হয় না।
[সম্পাদনা] জলাতঙ্ক
অ্যান্ত্রাক্স পরিরোধক আবিস্কারেরে পর পাস্তুর অন্যান্য রোগের প্রতিরোধের জন্য গবেষণা শুরু করেন। তিনি জলাতঙ্ক নিয়ে কাজ করে দেখেন এটি নার্ভাস সিস্টেমের একটি রোগ এবং আক্রান্ত পশুর স্পাইনাল কর্ডের নির্জাস দ্বারা অন্য প্রানিকে জলাতঙ্কে আক্রান্ত করা যায়। এই পদ্ধতিতে তিনি রোগ প্রতিরোধে অক্ষম র্যাবিস ভাইরাস উৎপাদন করেন, যা জলাতঙ্কের ভ্যাক্সিন হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। ১৮৮৫ সালে পাস্তুর প্রথম এক শিশু বালকের উপর এই ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করেন। ছেলেটি জলাতঙ্ক আক্রান্ত কুকুর কামড়িয়েছিল, তার পর ছেলেটির মা তাকে পাস্তুরের গবেষণাগারে নিয়ে আসেন। পাস্তুর ছেলেটিকে ভ্যাক্সিন প্রদান করেন এবং ছেলেটি ভাল হয়ে উঠে।
[সম্পাদনা] মৃত্যু
র্যাবিস ভ্যাক্সিন আবিস্কারের পরে ফ্রান্স সরকার পাস্তুর ইনস্টিটিউট (Pasteur Institute)স্থাপন করেন। এই ইনস্টিটিউটের পরিচালক থাকাকালীন ১৮৯৫ সালে লুই পাস্তুর মৃত্যু বরণ করেন। [১]