জ্যোতির্বিজ্ঞান
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জ্যোতির্বিজ্ঞান (astronomy) মহাবিশ্বে ভ্রাম্যমান জ্যোতিষ্কদের বিষয়ে বিজ্ঞান। এই বিজ্ঞান জ্যোতিষশাস্ত্র (astrology) নয়। জ্যোতির্বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞদের বলা হয় জোতির্বিজ্ঞানী (astronomer), আর জ্যোতিষশাস্ত্রবিশারদকে বলে জ্যোতিষী (astrologer)।
প্রাচীন মিশর(Egypt), ভারত, ব্যাবিলন, অ্যাজটেক ইত্যাদি সভ্যতায় গ্রহ, নক্ষত্র ইত্যদির আকাশে অবস্থান পরিবর্তন লক্ষ্য করে লিপিবদ্ধ করা হত। পরবর্তীকালে রোমান-অধিকৃত মিশরের জোতির্বিজ্ঞানী টলেমির পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভর করে জোহান কেপলার আধুনিক জোতির্বিজ্ঞানের মূল কয়েকটি সূত্র অনুধাবন করেন। জ্যোতির্বিজ্ঞান (Astronomy) বিজ্ঞানের এমন একটি শাখা যাতে মহাবিশ্বে অবস্থিত সকল বিচ্ছিন্ন এবং অবিচ্ছিন্ন বস্তুসমূহের উৎপত্তি, বিবর্তন, গঠন, দূরত্ব এবং গতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। এর মধ্যে জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান (Astrophysics) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যার উদ্দেশ্য মূলত মহাজাগতিক বস্তুসমূহের গাঠনিক বা বাহ্যিক ধর্ম এবং গঠন নিয়ে আলোচনা করা।
জ্যোতির্বিজ্ঞান একটি প্রাচীন বিজ্ঞান হলেও দূরবীন আবিষ্কার ছাড়া এর একটি আধুনিক বিজ্ঞানে পরিণত হওয়া সম্ভব ছিলনা। তাই এর আধুনিকায়নে বেশ দেরী হয়েছে। বংংশ শতাব্দীতে পেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞান দুটি অংশে ভাগ হয়ে গিয়েছে: পর্যবেক্ষণিক জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং তাত্ত্বিক জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান। প্রথমটির কাজ হল উপাত্ত সংগ্রহ করা, যার জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত যন্ত্র তৈরী ওর এর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ। দ্বিতীয়টির মূল বিষয় হচ্ছে এই পর্যবেক্ষণগুলোর সাপেক্ষে উপযুক্ত নকশা প্রণয়ন বা কম্পিউটার নকশায় এর রুপদান। বলা যায় তাত্ত্বিক জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানের কাজ হচ্ছে পর্যবেক্ষণলব্ধ জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক উপাত্তগুলোকে ব্যাখ্যা করা। জ্যোতির্বিজ্ঞানের পর্যবেক্ষণগুলো বিশুদ্ধ পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন তত্ত্বের প্রমাণেও কাজে লাগতে পারে, যেমন: সাধারণ আপেক্ষিকতা।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা] ইতিহাস
এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাস
প্রাচীনকালে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা কেবলমাত্র খালি চোখে আকাশ পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভর করতো। কিছু কিছু অঞ্চলে এমন কতগুলো সাজ-সরঞ্জামের পরিচয় পাওয়া গেছে যা দেখে বোঝা যায় খালি চোখে দেখার মাধ্যমেও তারা জ্যোতির্বিজ্ঞানের অনেক তত্ত্ব উদ্ঘাটনের চেষ্টা করেছিলো এবং সে উদ্দেশ্যেই বিশেষ কিছু স্থাপনা গড়ে তুলেছিল। যেমন: স্টোনহেঞ্জ।
[সম্পাদনা] পরিসর
জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানের যুগোপযোগী চর্চার ফলে জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিসর বিংশ শতাব্দীতে ব্যাপক প্রসারিত হয়েছে। মূলত বিংশ শতাব্দীকেই জ্যোতির্বিজ্ঞানের সূচনা, বিকাশ এবং পরিপক্কতার যুগ বলে অভিহিত করা চলে। তার উপর পরমানবিক বিক্রিয়ার মৌলিক বৈশিষ্ট্যসমূহ আবিষ্কৃত হওয়ার ফলে বিভিন্ন নক্ষত্রের অভ্যন্তরে কিভাবে শক্তি উৎপন্ন হচ্ছে তার স্বরুপ বুঝা গেছে। এর অব্যবহিত ফল হিসেবেই মহাবিশ্বের শক্তির উৎস সম্বন্ধে বিস্তিরিত গবেষণা করা সম্ভব হয়েছে এবং জন্ম হয়েছ বিশ্বতত্ত্বের (Cosmology)। বিশ্বতত্ত্বের মূল আলোচ্য বিষয় মহাবিশ্বের উৎপত্তি এবং বিবর্তন। এ সব কিছুর ফলেই আমরা আজ জানি যে পৃথিবীতে প্রাপ্ত পরমাণুগুলো মহাবিশ্বের বিবর্তনের এমন একটি সময় সৃষ্টি হয়েছিল যখন ধূলিমেঘ ছাড়া আর কোন কিছুরই অস্তিত্ব ছিলনা। আর সেই ধূলিমেঘের মধ্যে প্রথমে কেবল হাইড্রোজেনেরই অস্তিত্ব ছিল। এভাবেই এই বিজ্ঞান অনেকদূর এগিয়ে গেছে যা একই সাথে মানুষকে এগিয়ে রাখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে অগ্রনী ভূমিকা পালন করছে; কারণ জ্যোতির্বিজ্ঞানের মাধ্যমেই সবচেয়ে সফল ভবিষ্যৎবাণী করা সম্ভব।
তবে জ্যোতির্বিজ্ঞানের সর্বপ্রধাণ সীমাবদ্ধতা বা অন্য যাই বলা হোক না কেন তা হল এটি এখনও একটি খাঁটি পর্যবেক্ষণমূলক বিজ্ঞান। অনেক দূরবর্তী বস্তুসমূহ নিয়ে গবেষণা করতে হয় বিধায় এতে পরীক্ষণের সুযোগ খুবই সীমিত। তাছাড়া যে বস্তুসমূহ নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হয় সেগুলোর তাপমাত্রা, চাপ বা রাসায়নিক গঠন সম্পর্কে কোন তথ্যকেন্দ্রিক নিয়ন্ত্রণ থাকা সম্ভব নয়। তবে বর্তমান যুগে এই বিজ্ঞানের বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পরীক্ষণ চালনা সম্ভব হয়েছে; যেমন: ভূপৃষ্ঠে পতিত উল্কাপিন্ড, পাথর বা চাঁদ থেকে নিয়ে আসা মাটি নিয়ে বিস্তর গবেষণা সম্ভব হয়েছে। এর সাথে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের সাট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরে প্রাপ্ত ধূলিকণা নিয়ে গবেষণাও এর অন্তর্ভুক্ত। এভাবে জ্যোতির্বিদ্যা পর্যবেক্ষণ ক্ষেত্রেও প্রসিদ্ধি লাভ করছে। ভবিষ্যতে হয়তোবা ধূমকেতুর ধূলিকণা বা মঙ্গল গ্রহের মাটি নিয়ে মহাশূন্যযানে বসেই গবেষণা করা যাবে। তবে এসব গবেষণার বেশীর ভাগই পৃথিবীকেন্দ্রিক। পর্যবেক্ষণকাজে বিজ্ঞানের অন্য শাখাসমূহের সাহায্য এখানে মূখ্য। সহযোগী শাখাসমূহের মধ্যে আছে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, অণুজীববিজ্ঞান, প্রত্নতত্ত্ব ইত্যাদি।
[সম্পাদনা] আরও দেখুন
[সম্পাদনা] তালিকা
- জ্যোতির্বিজ্ঞানের নিবন্ধসমূহের তালিকা
- Category:প্রাচীন জ্যোতির্বিজ্ঞান
- Category:জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক মানমন্দির
- Category:জ্যোতির্বিজ্ঞান সংস্থা
- Category:জ্যোতির্বিজ্ঞানের কালপঞ্জি
[সম্পাদনা] প্রাসঙ্গিক নিবন্ধ
- জ্যোতিষ শাস্ত্র
- জ্যোতির্বিজ্ঞানী
- বিশ্বতত্ত্ব
- আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান বর্ষ
- মহাশূন্য অভিযান
- মহাশূন্য বিজ্ঞান
[সম্পাদনা] তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা] বহিঃসংযোগ
- International Year of Astronomy 2009 IYA2009 Main website
- Cosmic Journey: A History of Scientific Cosmology from the American Institute of Physics
- Astronomy Picture of the Day
- Sky & Telescope publishers
- Southern Hemisphere Astronomy
- Astronomy Magazine
- Search Engine for Astronomy
- Universe Today for astronomy and space-related news
- Hubblesite.org - home of NASA's Hubble Space Telescope
- The New Student's Reference Work/Astronomy